জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে ইটভাটাগুলির বিরুদ্ধে। —নিজস্ব চিত্র।
আপন খেয়ালে বয়ে চলতে চলতেই রূপনারায়ণের বুকে চর জেগে গড়ে উঠেছিল গ্রাম। ক্রমে চরে শুরু হল জনবসতি। নাম হল মায়াচর। রূপনারায়ণের জল কখনও কখনও ভাসিয়ে দিতে আস্ত গ্রাম। জল সরে গেলে আবার শুরু হত চরের মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই।
পঞ্চায়েত, বিধানসভা থেকে লোকসভা সবেতেই ভোটের আগে মায়াচরে পা পড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। কিন্তু দুর্দশা থেকে মুক্তি মেলেনি মায়াচরের মানুষের। বাসিন্দাদের দাবি, ভোট এলে সব রাজনৈতিক দল এখানে এসে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ভোটের পরে তাদের কেউ আর ‘মায়া’ দেখায় না। ফলে নদীর ভাঙনের আতঙ্ক বয়ে বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রুটি-রুজির চিন্তাও নিত্যসঙ্গী চরের মানুষের।
ভাঙনে গতিপথ পাল্টে রূপনারায়ণ বাঁকতে বাঁকতে গিলে খেয়েছে মায়াচরের অনেকটা অংশ। নদীগর্ভে চলে গিয়েছে বহু সংসার। প্রশাসন সূত্রে খবর মায়াচরে বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় আট হাজার। এর মধ্যে ভোটার রয়েছেন ৩ হাজার ২০০ জন। এখানে মোট চারটি বুথ রয়েছে। কাছের গঞ্জ মহিষাদলের সঙ্গে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকো। তাই আকাশে কালো মেঘ দেখলেই বুক কাঁপে মায়াচরের বাসিন্দাদের। মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়া থেকে মায়াচর পর্যন্ত সেতুর দাবি ওই এলাকায় দীর্ঘদিনের।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সেতু না পাওয়ার ক্ষোভ নিয়েই বাসিন্দারা জানান, ভোট এলেই জল পেরিয়ে তাঁদের ‘আশীর্বাদ’ নিতে ছুটে আসেন সব দলের নেতা- প্রার্থীরা। কিন্তু ভোট মিটে গেলে আর কাউকে দেখা যায় না। প্রতিদিন ফেরি পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয় চামেলি আদককে। তাঁর কথায়, ‘‘ভোট এলে অনেক প্রতিশ্রুতি শুনতে পাই। এ বারও পেয়েছি। এত বছরের অভিজ্ঞতায় এও জানি, এই সব প্রতিশ্রুতি অধরাই থেকে যায়।’’
স্থানীয়দের দাবি, এখানকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। তবে অনেকে মাছ ধরেও সংসার চালান। কিন্তু ইদানীং বেশ কিছু ইটভাটা গজিয়ে ওঠায় তা নতুন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, কাজের জন্য ওই সব ইট ভাটায় যেতে হয়। তবে তারা এতে খুশি নন। মায়াচরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ধান, পান আর সূর্যমুখীর মত নানা রকম চাষ হত বলে দাবি স্থানীয়দের। যদিও ওই সব জমি দখল করে একের পর এক ইটভাটা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় চাষি নকুল দিন্দা বলেন, ‘‘চাষাবাদ সারা জীবনের জন্য। তাই চাষের জমি ফিরে আসুক।’’
ভোটের প্রচারে ইতিমধ্যেই এই এলাকা ঘুরে গিয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী। আসবেন অন্য দলের প্রার্থীরাও। ফের নদী ভাঙন, যাতায়াত, চাষের সমস্যা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দেবেন। কিন্তু মায়াচরের মানুষের প্রতিদিনের লড়াই তার কতটা সুফল পাবে সেটাই দেখার।