প্রতীকী ছবি।
পরীক্ষা শেষ। এ বার প্রতীক্ষা ফলের। রবিবার দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা বাদে ঝাড়গ্রামে নির্বিঘ্নে ভোট হলেও সংশয়ে রয়েছে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। তবে প্রকাশ্যে জেতার দাবি করছেন দু’পক্ষই।
জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা সোমবার দলীয় কর্মীদের থেকে সাতটি বিধানসভার সর্বশেষ ভোটদানের তথ্য যাচাই করে দাবি করেন, ‘‘দলীয় প্রার্থী বিরবাহা সরেন দু’লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিততে চলেছেন।’’ শাসকদল এতটা আত্মবিশ্বাসী হচ্ছে কীভাবে? তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, একনিষ্ঠ ভোটার আর উপভোক্তা ভোটারের পাশাপাশি ‘ফ্লোটিং ভোটাররা’ বিরবাহাকে জেতাবেন। স্থানীয় নেতাদের উপর রাগ থাকলেও দিদির উপর কারও রাগ নেই। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলে বিজেপি ভাল ফল করলেও তৃণমূল ৮ শতাংশ ভোটে এগিয়ে রয়েছে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে শাসকদলের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও উপগোষ্ঠীর অন্তর্ঘাতের জেরে সুবিধা পেয়েছিল বিজেপি। সিপিএমের একাংশ নেতৃত্ব গেরুয়াশিবিরে যোগ দেওয়ায় বাম ভোটের কিছুটা বিজেপির দিকে গিয়েছিল। পঞ্চায়েত ভোটে এত কিছুর পরেও ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূল ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। বিজেপি পেয়েছিল ৩৯ শতাংশ ভোট। পঞ্চায়েতে ভোটে আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ এবং সাঁওতালি সামাজিক সংগঠন পারগানা মহল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছিল। এ বার পারগানা মহলের নেতা রবিন টুডুর স্ত্রী শাসকদলের প্রার্থী হওয়ায় পারগানা মহলের একাংশ ভোট তৃণমূলের পক্ষে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা হেমব্রম ভোট কেটে বিজেপির যাত্রাভঙ্গ করবেন। দ্বিতীয়ত, আদিবাসী কুড়মি সমাজ গত পঞ্চায়েত ভোটে সমাজগত ভাবে পঞ্চায়েত ভোটে অংশ নেয়নি। এ বার কুড়মি সমাজের একাংশ তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। ফলে তৃণমূলের দাবি, জয় এখন সময়ের অপেক্ষা। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এক লাখেরও বেশি ব্যবধানে জিতব।’’ তবে তৃণমূলের পোড় খাওয়া প্রবীণ নেতারা বলছেন, ভোট-ম্যাচকে এত হাল্কা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। তৃণমূলের নেতাদের একাংশ বলছেন, লড়াইটা হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। আগাম জয়ের ব্যবধান নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ তাঁরা।
বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী দাবি করছেন, ভোটের ফলে ম্যাজিক হতে চলেছে। সুখময়ের ব্যাখ্যা, ‘‘জঙ্গলমহলে শাসকদলের অত্যাচার সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারছেন না। কেন্দ্রে সুস্থির সরকার ও ঝাড়গ্রামে পরিবর্তনের স্বার্থে তৃণমূল ও সিপিএমের সাধারণ সমর্থকরাও আমাদের ভোট দিয়েছেন।’’ সেই সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের দাবি, মাঝি পারগানা মহলের বিভাজন এবং আদিবাসী কুড়মি সমাজের বিভাজনের ফলে আদিবাসী ও মাহাতো ভোটের একাংশ বিজেপির পক্ষে যাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের শিল্প স্থাপন, নতুন রেলপথের আশ্বাস ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে। ২০১৪ এখানে ৮৫.৬৭% ভোট পড়েছিল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ বারও ৮৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। জয় নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি দু’পক্ষই আত্মবিশ্বাসী। যদিও আড়ালে টেনশনের কথা জানাচ্ছেন উভয় পক্ষের ম্যাচ মেকাররা। তৃণমূলের এক প্রবীণ জেলা বলছেন, ‘‘আসলে পরিষেবা দিয়ে তো আর ভোট হয় না। আমাদের সংগঠন কোথায়। তুলনায় বিজেপি অনেক সংগঠিত। সেই কারণে ওরা অনেকটাই ভোট নিজেদের অনুকুলে নিয়ে যেতে পারবে।’’ পাশাপাশি, তৃণমূলের নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত বার উমা জিতেছিলেন সাড়ে তিন লক্ষেরো বেশি ভোটের ব্যবধানে। তাই ম্যাজিক ছাড়া বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রমের জেতা অসম্ভব।