নয়া ফুট ব্রিজের কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।
রেলমন্ত্রকের অমৃত স্টেশনের তালিকায় নাম উঠেছে। স্টেশনের ভবন কেমন দেখতে হবে, সে নিয়ে ছবিও মন্ত্রকের তরফে পোস্ট করা হয়েছে সমাজ মাধ্যমে। কিন্তু তাতে মেচেদা স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করা যাত্রীদের কোনও মাথা ব্যথা নেই। বরং তাঁদের প্রশ্ন, এই স্টেশনকে যদি এতই গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে, তবে আড়াই বছর পরেও কেন তৈরি হল না নতুন ফুট ব্রিজ? বা আগে থেকে বেহাল থাকলেও বর্ধমান স্টেশনের দুর্ঘটনার পরেই বা কেন সেটির দশা নজরে এল রেল কর্তৃপক্ষের! আগে থাকে সেটি সংস্কার করা হয়নি কেন?
স্টেশন হিসাবে মেচেদা পূর্ব মেদিনীপুরের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে। প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এই স্টেশন ব্যবহার করেন। তবে স্টেশনের পরিকাঠামো, ফুট ব্রিজের হাল নিয়ে যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ ছিল। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রকের ফেসবুক পেজে সংস্কারের পরে মেচেদা স্টেশনের প্রবেশপথ, বুকিং কাউন্টার কেমন দেখতে হবে, তা নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। ছবিতে ওই ভবনটি প্রস্তাবিত বলে উল্লেখ রয়েছে। ছবিটি সামনে আসার পরে সংস্কার কাজে রেলের বিলম্বিত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করছেন যাত্রীদের একাংশ।
সম্প্রতি বর্ধমান স্টেশনে পুরনো জলাধার ভেঙে তিনজনের মৃত্যুর পরে রেল দফতরের হুঁশ ফিরেছে। তড়িঘড়ি মেচেদা স্টেশনের ফুট ওভার ব্রিজের একাংশ দিয়ে যাত্রীদের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মেচেদা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে স্টেশনের প্লাটফর্মে ট্রেন ধরতে যাওয়া যাত্রীদের হায়রানি চরমে উঠেছে। যাত্রীদের লেভেলক্রসিং পেরিয়ে ঘুরপথে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছেন বয়স্ক, অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী যাত্রীরা। মেচেদায় আত্মীয় বাড়ি থেকে মেদিনীপুর শহরে বাড়ি ফিরছিলেন বয়স্ক দম্পতি প্রশান্ত দত্ত এবং মঞ্জু দত্ত। বাসস্ট্যান্ড থেকে প্ল্যাটফর্মে যাতায়াত করতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা প্রশান্ত বলেন, ‘‘আমার ৬৮ বছর বয়স। কোমরের সমস্যা রয়েছে। এতটা পথ পেরিয়ে ট্রেন ধরতে যেতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।’’
শুক্রবার মেচেদা স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের পিছনের দিক দিয়ে যাত্রীদের প্রথমে আবর্জনার স্তুপের পাশ দিয়ে হেঁটে লেভেলক্রসিং পার হতে হচ্ছে। পরে কিছুটা পথ এগিয়ে পার্সেল বুকিং অফিসের পাশ দিয়ে ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের ওভার ব্রিজে উঠে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে প্লাটফর্মে যেতে হচ্ছে। মেচেদার বাসিন্দা সুবোধ হাজরা, সুভাষ সাঁতরারা বলছেন, ‘‘মেচেদা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার রাস্তায় নজরদারির জন্য পুলিশ থাকে না। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও নেই। যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে লেভেল ক্রসিং পারাপারের সময় ট্রেন চলে গেলে যে কোনও সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সন্ধ্যাবেলা থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায়।’’
জেলার পান এবং ফুল রফতানির জন্য দূরপাল্লার ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ টন পান এবং ফুল তোলা হয় মেচেদা থেকে। এ থেকে প্রতিদিন রেলের ভাঁড়ারে প্রায় দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা ঢোকে। কিন্তু এমন এক গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল ছিল বলে যাত্রীদের অভিযোগ। এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন আগে অভিযোগ জানালেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এখন বন্ধ করা পুরনো ফুট ব্রিজের অদূরেই নতুন ফুট ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু ২০২১ সালের অগস্ট মাস থেকে শুরু হওয়া ওই ব্রিজের কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে রেল মন্ত্রক মেচেদার নতুন রূপের যে ছবি পোস্ট করেছে, তা বাস্তবায়িত করতে আদতে কত সময় লাগবে, সে নিয়ে যাত্রীদের মনে সংশয় রয়েছে।
রেল দফতর সূত্রের অবশ্য খবর, নতুন ফুট ব্রিজের শেষ পর্যায়ের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। চলতি জানুয়ারিতেই কাজ সম্পূর্ণ করে সেটি চালুর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। খড়্গপুর ডিভিশনের রেল দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নতুন ব্রিজের কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ করতে ঠিকাদার সংস্থা অতিরিক্ত কর্মী নিযুক্ত করে দিবারাত্রি কাজ চালাচ্ছেন। আগামী ২৬ জানুয়ারি নতুন ব্রিজ চালুর সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।’’