বার্তা: পঞ্চুরচকে রবীন্দ্র মূর্তির দেখভাল করে নাগরিক কমিটি। নিজস্ব চিত্র
শহরে থাকা বেশিরভাগ মনীষী এবং বিপ্লবীর মূর্তি যেখানে অবহেলা আর অনাদরে থাকছে, বিজ্ঞাপনের দাপটে মূর্তির মুখ ঢাকছে, সেখানে এ যেন এক ব্যতিক্রমী ছবি। মূর্তির যত্নে এগিয়ে এসেছে একদল যুবক।
শহরের পঞ্চুরচক এলাকায় রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ণাবয়ব মূর্তি। কবিগুরুর সেই মূর্তি রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন রঞ্জিত সিংহ, সুব্রত চক্রবর্তী, মিলন আঢ্যরা। মূর্তির আশেপাশে বিজ্ঞাপনের কোনও ব্যানার- ফেস্টুন- ফ্লেক্স পড়ল কি না, রোজ তাঁরা নজর রাখছেন। নজর এড়িয়ে ব্যানার, ফেস্টুন দিলেও রক্ষা নেই। ওই যুবকেরা সেই ব্যানার, ফেস্টুন খুলে গুছিয়ে রাখছেন। সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাঁরা। বলছেন, আপনাদের ব্যানার, ফেস্টুন রাখা আছে। সময় করে এসে নিয়ে যান। সংস্থার কোনও প্রতিনিধি সেগুলি নিতে এলে তাঁকে অনুরোধ করে ওই যুবকেরা বলছেন, ‘‘মূর্তির আশেপাশে বিজ্ঞাপন দেবেন না। অন্য কোথাও দিন।’’
কয়েকজন যুবকের এই উদ্যোগ সম্পর্কে মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ বলছেন, ‘‘ ওই যুবকেরা যে কাজ করছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। মূর্তির দেখভালে সকলেরই এ ভাবে এগিয়ে আসা উচিত।’’ পাশাপাশি তাঁর আশ্বাস, ‘‘মূর্তির আশেপাশে বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত নয়। আমরাও নজরদারি আরও বাড়াচ্ছি। সমস্ত সংগঠন- সংস্থার কাছেই অনুরোধ রাখছি, মূর্তির পাশে যেন ব্যানার- ফেস্টুন না দেন। কেউ দিয়ে থাকলে যেন খুলে নেন।’’
মেদিনীপুর কলেজের অদূরেই রয়েছে পঞ্চুরচক। সুব্রতেরা রোজ সন্ধ্যায় এখানে চা খেতে আসেন। আড্ডা দেন। রঞ্জিত একটি কলেজে পড়ান। একটি বিএড কলেজের শিক্ষক সুব্রত। মিলনও একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। সুব্রতর কথায়, ‘‘মাস খানেক আগে আমরা ঠিক করি, মূর্তির পাশে কাউকে ব্যানার- ফেস্টুন লাগাতে দেব না। মূর্তির যত্নেই আমাদের এই উদ্যোগ।’’ মেদিনীপুর শহরে মূর্তির সংখ্যা কম নয়। অনেক আবক্ষ এবং কিছু পূর্ণাবয়ব মূর্তি রয়েছে। অনেকে তাই মেদিনীপুরকে ‘মূর্তির শহর’ বলে ডাকেন। তবে অনেক মূর্তিতেই শুধু অবহেলা আর অনাদরের ছাপ।
শহরের অন্য মূর্তিগুলির মতো দশা ছিল রবীন্দ্রনাথের মূর্তির। উঠে গিয়েছিল রঙের পরত। মেদিনীপুর শহর নাগরিক কমিটির উদ্যোগে এক সময়ে এই মূর্তি বসানো হয়েছিল। পরে কমিটির উদ্যোগে মূর্তিতে নতুন রং করা হয়। মূর্তির হতশ্রী দশা ঘোচে। সুব্রত বলছিলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে প্রশাসনের এক কর্মসূচির ফ্লেক্সও লাগানো হয়েছিল। আমরা খুলে রেখে পরে ফিরিয়ে দিয়েছি।’’
মনীষী, বিপ্লবীদের জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থার তরফে মূর্তিতে মালা দেওয়া হয়। পরে অনেক ক্ষেত্রে আর শুকনো মালা সরানোরও লোক মেলে না। রঞ্জিত, মিলনরা বলছিলেন, ‘‘নজরদারি আর যত্নের অভাবে শহরের মূর্তিগুলো নষ্ট হতে দেখে কষ্ট হয়। আমরা প্রায়ই এখানে আসি। তাই সকলে মিলে ঠিক করেছি, এই মূর্তিতে যত্নের অভাব হতে দেব না। বিজ্ঞাপনে যাতে মূর্তির মুখ না- ঢাকে তা-ও দেখব।’’