পালাবদলেও ধার কমেনি প্রতিবাদীর

এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘হাসপাতাল কল্লোল’। আর স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা তাঁকে চেনে ‘চোখে আঙুল দাদা’ বলে। কারণ, হাসপাতালে নানা অব্যবস্থা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়াটাই নিজের কর্তব্য মনে করেন বছর তিপান্নোর কল্লোল তপাদার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০৮
Share:

কল্লোল তপাদার। নিজস্ব চিত্র।

এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘হাসপাতাল কল্লোল’। আর স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা তাঁকে চেনে ‘চোখে আঙুল দাদা’ বলে। কারণ, হাসপাতালে নানা অব্যবস্থা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়াটাই নিজের কর্তব্য মনে করেন বছর তিপান্নোর কল্লোল তপাদার।

Advertisement

প্রায় দেড় দশক আগে বাম আমলে সরকারি হাসপাতালের নানা অব্যবস্থা নিয়ে তাঁর প্রতিবাদ-লড়াই শুরু হয়েছিল। রাজ্যে পালা বদলের পরে তিনি এখন শাসক দলের কাউন্সিলর। কিন্তু কল্লোর প্রতিবাদী সত্ত্বা তাতে টাল খায়নি। নিয়মিত ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের খোঁজখবর নেন। আউটডোরে কোন চিকিৎসক কখন বসছেন, কেউ ফাঁকি দিচ্ছেন কিনা, রোগীদের পরিবেষা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা, খুঁটিনাটি সব খবর নেন। কোথাও অনিয়ম দেখলেই নালিশ ঠোকেন। সম্প্রতি তো ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন কল্লোলবাবু। তাতে কাজও হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে নির্দেশ আসার পরে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাঝিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

তৃণমূল পরিচালিত ঝাড়গ্রাম পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কল্লোলবাবু। তবে শাসক দলের পুরপিতা হলেও তাঁর আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়নি। এখনও শহরের বাছুরডোবায় ইটের গাঁথনির দেওয়াল আর অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া পুরনো বড়িতে থাকেন কল্লোলবাবু। আগে রেল মার্কেটে সোনার দোকান চালাতেন কল্লোলবাবু। বছর পাঁচেক হল দোকান বন্ধ। তবে তাঁর স্ত্রী দীপাদেবী শহরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এক ছেলে ও এক মেয়ে বি-টেক পাশ করেছেন।

Advertisement

কল্লোলবাবুর বাড়ির বৈঠকখানার দেওয়ালে নেত্রী মমতার সঙ্গেই রয়েছে বিবেকানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদা মায়ের ছবি। সেই ঘরে বসে কানে ফোন নিয়ে এক রোগীর পরিজনের অভিযোগ শোনার ফাঁকে কল্লোলবাবু জানালেন, জঙ্গলমহলের গরিবমানুষদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী উপুড়হস্ত নানা পরিষেবা দিয়েছেন। কিন্তু একাংশ চিকিৎসক ও কর্মীর ব্যবসায়িক মনোভাবের জন্য রোগীরা সরকারি হাসপাতালে উপযুক্ত পরিষেবা পাচ্ছেন না। একাংশ বিরোধীর অবশ্য অভিযোগ, নিজের ঘনিষ্ঠজনদের হাসপাতালের কাজের বরাত পাওয়ানোর জন্য কল্লোলবাবু দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন। তাই উনি হাসপাতালের বিরুদ্ধে সব সময় অভিযোগ তোলেন।

শুনে ঝাঁঝিয়ে উঠলেন কল্লোলবাবু। বললেন, “কোনও দিন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিইনি বলে এখনও ভাঙা বাড়িতে থাকি। রোগীরা যাতে প্রকৃত পরিষেবা পান, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সেই আবেদনই জানিয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement