বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ‘সবুজ গড়’ পূর্ব মেদিনীপুরে চি়ড় ধরিয়েছে বামেরা। রাজ্য জুড়ে বিপুল জয়ের মাঝে কাঁটা হয়ে থেকেছে হলদিয়া, তমলুক আর পূর্ব পাঁশকুড়া। কেন এই হার তা নিয়ে ফলপ্রকাশের পর নানা কাঁটাছেঁড়া হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে হলদিয়া পুরসভা ও সুতাহাটা ব্লকের সাংগঠনিক কমিটি। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন কারখানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রমিক সংগঠনের একাধিক নেতাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হারের জন্য শাসক দল তৃণমূলের অন্দরে যখন এইসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তখন জেলায় গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলে চেয়ে ভাল ফল করেও একই পথে হাঁটছে বিরোধী দল সিপিএমও।
২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি রক্ষা আন্দোলন পর্বের জেরে ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৬ টি বিধানসভা কেন্দ্রেই হার হয় বামফ্রন্ট প্রার্থীদের। এরপর ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ও ২০১৫ সালে পুরসভার নির্বাচনেও হারের ধারা অব্যাহত থাকে। কিন্তু এ বার বিধানসভা ভোটে জেলার ১৬ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে হলদিয়া, তমলুক ও পূর্ব পাঁশকুড়া আসন তৃণমূলকে হারিয়ে জয়লাভ করেন বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীরা। জেলার বাকি ১৩ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে তৃণমূলের সঙ্গে জোট প্রার্থীদের হারের ব্যবধান গত বারের চেয়ে কমেছে। সামগ্রিকভাবে রাজ্যের অন্যান্য জেলার তুলনায় পূর্ব মেদিনীপুরে বামফ্রন্টের সাংগঠনিক অগ্রগতি হয়েছে। তবে জেলায় এমন ফলাফলের পরেও দলের একাংশ নেতা ও পার্টি সদস্য অন্তর্ঘাত করেছে বা নিষ্ক্রিয় থেকেছে এমনকি সরাসরি বিরোধী দল তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে কাজ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে জেলার পাঁশকুড়া পশ্চিম, উত্তর কাঁথি, রামনগর, নন্দকুমার, মহিষাদল, পটাশপুর, এগরা বিধানসভার মত বেশ কিছু আসনে সম্ভবনা সত্ত্বেও ভাল ফল করতে পারেনি বলে অভিযোগও উঠেছে। আর এই কারণেই দলের ওই নেতা ও সদস্যদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তদন্ত শুরু করেছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। গাফিলতি প্রমাণ হলে শো-কজ বা বহিষ্কারের মত কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।
গত ২৮ জুন তমলুকে সিপিএমের জেলা কার্যালয়ে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের উপস্থিতিতে জেলা কমিটির বৈঠকে ওইসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপরেই জেলা নেতৃত্বের তরফে দলের প্রতিটি জোনাল কমিটিকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে এই নেতৃত্ব ও সদস্যদের চিহ্নিত করে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। আগামী অগস্ট মাসের মধ্যে জোনাল কমিটিগুলির রিপোর্ট জেলা নেতৃত্বের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। জোনাল কমিটির ওই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করে দলীয় ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দলীয়ভাবে ওই তদন্তের প্রসঙ্গে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের সময় যে সব নেতৃত্ব ও দলীয় সদস্য বাম-জোট প্রার্থীর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত করেছে, দলীয় কাজে নিষ্ক্রিয় থেকেছে বা বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করেছেন তাঁদের চিহ্নিত করার জন্য তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’