এক সময় এলাকা ছিল সিপিএমের দুর্গ। ২০১১-র পরিবর্তনের ঝড়েও জয় এসেছিল। কিন্তু সেই খড়্গপুর গ্রামীণ কেন্দ্রে তারপর থেকে ক্রমশ কোণঠাসা হয়েছে বামেরা। এ বারের ভোট প্রচারও তেমন জমছিল না। তবে শনিবার সকালে মেদিনীপুর সদর ব্লকের অন্তর্গত বেনাডিহি, পাথরা প্রভৃতি এলাকায় জোটের বেশ লম্বা মিছিল হল। লাল পতাকার সঙ্গে মিশে গেল তেরঙা ঝান্ডাও।
এ দিন খড়্গপুর গ্রামীণের দলীয় প্রার্থী শাহজাহান আলির সমর্থনে মিছিলে পা মেলানোর পাশাপাশি পথসভা করেন সাংসদ মহম্মদ সেলিম। তৃণমূল-বিজেপিকে হারানোর ডাক দিয়ে বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রাখো। মানুষ লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রাখেনি। তারা তাদের হক-কথা জোরে বলছে, বলবে। আমরা বলছি, তৃণমূল হটাও বাংলা বাঁচাও।’’
এ দিনের মিছিলে প্রার্থী শাহজাহান ছাড়াও ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিজয় পাল। এই সব এলাকায় এক সময় সিপিএমের সংগঠন বেশ মজবুত ছিল। তবে রাজ্যে পালাবদলের পরে কোণঠাসা হতে শুরু করে তারা। মাথা তোলে তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা, সব নির্বাচনেই ঘাসফুলের জয়জয়কার হয়েছে। সিপিএমের অবশ্য অভিযোগ, পঞ্চায়েত-লোকসভায় এই এলাকায় ভোট লুঠ করেছে তৃণমূল। এ বার তৃণমূল ভোট লুঠ করতে এলে মানুষই রুখে দেবে। মিছিলের মাঝপথে হাতিহল্কায় পথসভা করেন সেলিম। তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত কয়েকজন সভা বানচাল করার চেষ্টা করে বলে সিপিএমের অভিযোগ। উত্তেজিত হয়ে পড়েন সিপিএম কর্মীরাও। পরিস্থিতি সামাল দেন সেলিমই। তৃণমূল সমর্থকরা যখন চিৎকার করে সভা বানচালের চেষ্টা করছে, তখন পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। সে প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, “পুলিশ শুধু তৃণমূলের লোকজনকে পাহারা দিচ্ছে। ভোটের পরও পাহারা দিতে হবে। আমরা কাউকে আক্রমণ করব না। তৃণমূল তো পাঁচজন পুলিশ কর্মীকেও খুন করেছে। তৃণমূলের না হলে লজ্জা নেই। আপনাদের তো লজ্জা রয়েছে। ভাবছেন ওরা নিরাপত্তা দেবে। কেউ কাউকে নিরাপত্তা দেয় না।”
তৃণমূল অবশ্য এ সবে কান দিচ্ছে না। খড়্গপুর গ্রামীণের তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “সিপিএমের কাজ নেই। তাই কুৎসা করছে। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন। উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে, বাংলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে, গ্রামবাংলার উন্নতির জন্য মানুষ তৃণমূলকেই সমর্থন করবে।’’
এ দিন ঘাটাল বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী কমল দোলুইয়ের সমর্থনে ঘাটালের বরদা চৌকানে সভা করেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। বলেন, “এমন রাজ্যে বাস করছি যে, হাসপাতালে কুকুরের ডায়ালিসিস হয়, কিন্তু মানুষের রক্ত লাগে না। এটা ভাবতেও আমাদের লজ্জা হয়।” বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যেও ভেতরে ভেতরে আঁতাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন সেলিম। বলেন, “ঘাসফুল আর পদ্মফুল রাজ্যের মানুষকে এপ্রিল ফুল করছে। মোদীজীর সঙ্গে মমতার আঁতাত রয়েছে।”