প্রতীকী ছবি।
তাঁদের তফসিলি উপজাতির (এসটি) তালিকাভুক্ত করতে হবে, এই দাবিতে এ বার আন্দোলনের ডাক দিল আদিবাসী কুড়মি সমাজ। ‘ডহর ছেঁকা’ নামে ওই কর্মসূচিতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্য ছাড়াও ঝাড়খণ্ড ও ওডিশায় রাস্তা অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে। কুড়মালি ভাষায় ‘ডহর ছেঁকা’ শব্দের অর্থ রাস্তা অবরোধ। পুজোর আগে এই অবরোধ ঘিরে অস্বস্তিতে প্রশাসন।
কুড়মি সমাজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ সেপ্টেম্বর ঝাড়গ্রাম জেলার গুপ্তমণিতে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং ঝাড়গ্রাম শহরে ৯ নম্বর রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হবে। এ ছাড়াও আন্দোলনকে সমর্থনকারী বিভিন্ন কুড়মি সংগঠন বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ করবেন বলে জানা গিয়েছে। আদিবাসী কুড়মি সমাজের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক রাজেশ মাহাতো জানান, ওই দিন হাজার হাজার কুড়মি জনজাতির মানুষ তির-ধনুক-টাঙির মতো জাতীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পথে নামবেন।
বর্তমানে ওবিসি তালিকাভুক্ত কুড়মিদের এসটি তালিকাভুক্ত করার দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়া জেলায় রেল অবরোধ করেছিল কুড়মি সংগঠনটি। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ মার্চ আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতাদের আলোচনায় ডেকেছিল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের কাছে তিন দফা দাবি পেশ করা হয়েছিল। কুড়মি সমাজের দাবি, অবিলম্বে কুড়মিদের এসটি তালিকা ভুক্ত করে আদিবাসী জাতিগত স্বীকৃতি দিতে হবে। কুড়মিদের ধর্ম সারনা। অথচ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কুড়মিদের হিন্দু বলে উল্লেখ করা হয়। সারনা ধর্মের কোড-সহ সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করেছেন কুড়মিরা। সেই সঙ্গে কুড়মিদের মাতৃভাষা কুড়মালিকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও করা হয়েছে।
রাজেশবাবু জানান, ১৯৩১ সাল পর্যন্ত কুড়মিরা উপজাতি তালিকাভুক্ত ছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের আমলেই কুড়মিদের এসটি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। পঞ্চাশের দশকে যখন নতুন করে এসটি তালিকা তৈরি হয়, তাতে ১৯১৩ সালে গঠিত দেশের ১৩টি উপজাতির তালিকার মধ্যে ১২টি উপজাতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। যদিও বাদ পড়ে যায় কুড়মি সম্প্রদায়।
গত ৪ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ায় গিয়ে কুড়মি সমাজের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। রাজেশবাবুর দাবি, ওই দিন মুখমন্ত্রী আলোচনা সাপেক্ষে কুড়মি সমাজের দাবিগুলি কেন্দ্রকে সুপারিশ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। রাজেশবাবুর অভিযোগ, “এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তরফ থেকে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত মেলেনি। তাই আমরা আন্দোলন শুরু করছি।” অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণমন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো নিজেও কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ। তিনি বলেন, “কুড়মিদের দাবিগুলি ক্যাবিনেটে পর্যালোচনা করে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কুড়মিদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। পুজোর আগে এমন কর্মসূচি করে আখেরে মানুষের সমস্যা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।”