Kurmi Community

ভূমিজদের দাবিতে সায় দিতেই মূর্তির দাবি কুড়মিদেরও 

জাতিসত্তার আন্দোলন ক্রমেই ছড়াচ্ছে জঙ্গলমহলে। ভূমিজ সংগঠনের দাবি মেনে শহরের কলেজ মোড়ে চুয়াড় বিদ্রোহের শহিদ রঘুনাথ সিংয়ের মূর্তির জায়গা চিহ্নিত করেছে ঝাড়গ্রাম পুরসভা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১৭
Share:

জঙ্গলমহলের আদিবাসী। — ফাইল চিত্র।

এক রঘুনাথের মূর্তি বসানোর জায়গা দিতে সম্মত হয়েছে ঝাড়গ্রাম পুরসভা। তিনি চুয়াড় বিদ্রোহের শহিদ আদিবাসী ভূমিজ সম্প্রদায়ের রঘুনাথ সিং। এ বার আর এক রঘুনাথের মূর্তি বসানোর দাবিতে সরব হয়েছেন কুড়মিরা। তিনি চুয়াড় বিদ্রোহের শহিদ রঘুনাথ মাহাতো।

Advertisement

জাতিসত্তার আন্দোলন ক্রমেই ছড়াচ্ছে জঙ্গলমহলে। ভূমিজ সংগঠনের দাবি মেনে শহরের কলেজ মোড়ে চুয়াড় বিদ্রোহের শহিদ রঘুনাথ সিংয়ের মূর্তির জায়গা চিহ্নিত করেছে ঝাড়গ্রাম পুরসভা। আর তাতেই পুর-কর্তৃপক্ষের উপর চটেছে কুড়মি সংগঠনগুলি। কারণ, বছর দু’য়েক আগে কুড়মিরা শহরে চুয়াড় বিদ্রোহের ‘মহানায়ক’ রঘুনাথ মাহাতোর মূর্তি বসানোর দাবি তোলে। পুরপ্রধানকে স্মারকলিপিও দিয়েছিল একটি কুড়মি সংগঠন। কিন্তু এ ব্যাপারে পুরসভা কোনও উদ্যোগই করেনি বলে কুড়মিদের অভিযোগ।

এর আগে জনজাতি আবেগের কাছে মাথা নোয়াতে হয়েছে প্রশাসনকে। ঝাড়গ্রামের রূপকার তথা সাংসদ নরসিংহ মল্লদেবের ব্রোঞ্জের মূর্তি শহরের রাস্তার ধারে বসানো যায়নি। প্রস্তাবিত জায়গায় একটি আদিবাসী সংগঠন ঝান্ডা পুঁতে সরাসরি বিরোধিতায় নেমেছিল। শেষে গত জানুয়ারিতে নিজের প্রতিষ্ঠিত স্কুলেই ঠাঁই পেয়েছেন নরসিংহ। তা নিয়ে শহরবাসীর একাংশের ক্ষোভও রয়েছে। অন্য দিকে, এ বার কুড়মিরা রঘুনাথ মাহাতোর মূর্তি বসানোর দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়ায় অস্বস্তি বেড়েছে।

Advertisement

রঘুনাথ সিংয়ের মূর্তি বসানোর দাবিতে ভারতীয় আদিবাসী ভূমিজ সমাজের ডাকে বুধবার পুরভবনের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন আদিবাসী ভূমিজরা। শেষ পর্যন্ত ধর্নাস্থলে এসে পুরপ্রধান কবিতা ঘোষ ও পুরনির্বাহী আধিকারিক শান্তিকুমার রায়চৌধুরী ভূমিজদের দাবি মেনে শহরে রঘুনাথ সিংয়ের মূর্তি বসানোর জন্য জায়গা দেওয়ার আশ্বাস দেন। ভূমিজরা দাবি করেছিলেন, রাজ্য সড়কে সাবিত্রী সিনেমা মোড়ে মূর্তি বসানোর জায়গা দিতে হবে। তবে রাজ্য সড়ক পূর্ত সড়ক দফতরের অধীনে। সেখানে মূর্তি বসলে যান চলাচলে সমস্যা হতে পারে। তাই কলেজ মোড়ের কাছে মূর্তি বসানোর জায়গা দিতে সম্মত হয়েছে পুরসভা। তবে পুরপ্রধান জানিয়েছেন, মূর্তি তৈরির খরচ পুরসভা দিতে পারবে না। ভূমিজ সংগঠন মূর্তি তৈরি করে দিলে পুরসভা নিজের খরচে বেদি তৈরি করে তা বসিয়ে দেবে।

এরপরই পুর-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগে সরব হয়েছেন কুড়মি নেতারা। কুড়মি সমাজের (পশ্চিমবঙ্গ) সভাপতি রাজেশ মাহাতো বলছেন, ‘‘পুরসভার এই পক্ষপাতমূলক আচরণ কাম্য নয়। অবিলম্বে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় রঘুনাথ মাহাতোর মূর্তি বসাতে হবে।’’ সারা ভারত কুড়মি সমন্বয় সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি অশোক মাহাতোও বলেন, ‘‘২০২১ সালের নভেম্বরে আমরা পুর-কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে রঘুনাথ মাহাতোর মূর্তি বসানোর দাবি জানিয়েছিলাম। অথচ আমাদের দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে। শীঘ্রই পুরসভার সামনে বিক্ষোভ হবে।’’ অশোক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে লালগড় সেতুটি রঘুনাথ মাহাতোর নামাঙ্কিত হয়েছে। তাই শহরে রঘুনাথ মাহাতোর মূর্তি বসবে বলে তাঁরা আশাবাদী ছিলেন।আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি শিবাজি মাহাতো বলেন, "রঘুনাথ মাহাতোর মূর্তি বসানোয় গড়িমসি হলে পুরভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ হবে।"

দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও শহরে বাবা ভীমরাও আম্বেডকরের মূর্তি বসানোর দাবি তুলেছে। পুরপ্রধান কবিতা ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘ভূমিজ সংগঠন অনেক আগে আবেদন করেছিল। পুরসভার আর্থিক সংস্থান সীমিত। কলেজ মোড়ে রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে একটি জায়গা দেখা হয়েছে। মূর্তি ওরা (ভূমিজ সংগঠন) বানিয়ে দেবে।’’ তাঁর আশ্বাস, কুড়মিরা প্রস্তাব দিলে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement