রেলের পর এবার কুড়ুমিদের আবরোধ স্থল রাজ্য সড়ক।
দাবি আদায়ে রাজ্যকে বিঁধে কুড়মিদের নবতম আন্দোলন: ‘খেমাশুলি পার্ট-২’! তবে এবার রেল বা জাতীয় সড়ক অবরোধ নয়, বরং রাজ্যের বিভিন্ন সড়ক আটকে হবে দাবি আদায়েরওই আন্দোলন।
কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্তি-সহ বিভিন্ন দাবিতে পুজোর আগে খড়্গপুরের খেমাশুলিতে কেন্দ্র সরকারের অধীনে থাকা রেলপথ আর জাতীয় সড়ক টানা পাঁচদিন অবরোধ করেছিল কুড়মিদের একাধিক সংগঠন। কুড়মিদের আদিবাসী তালিকা ভুক্তির স্বপক্ষে রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্র সরকারের কাছে সংশোধিত সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) রিপোর্ট পাঠানো হবে এমন আশ্বাসে উঠেছিল সেই অবরোধ-বিক্ষোভ। কুড়মিদের অভিযোগ, এখনও সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে জমা পড়েনি। তাই এবার রাজ্যকে ১৫ দিনের চরমসীমা বেঁধে দিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ‘কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ’। সম্প্রতি (২৮ জানুয়ারি) পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির চকতারিণী এলাকায় সংগঠনের রাজ্য কমিটির এক সাংগঠনিক আলোচনা সভায় এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংগঠন সূত্রে খবর। কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের আহ্বায়ক কৌশিক মাহাতো জানাচ্ছেন, গত সেপ্টেম্বরে রাজ্য সরকার তিন মাসের মধ্যে সিআরআই রিপোর্ট পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছিল। চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সেই রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে জমা পড়েনি।
কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ-এর রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাতো বলেন, ‘‘পনেরো দিন অপেক্ষার পর ১৬ তম দিনে আন্দোলনের দিন ঘোষণা করা হবে। রাজ্য কমিটির সদস্যদের সহমতের ভিত্তিতে এবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলন হবে।’’ অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে রাজেশ জানাচ্ছেন, কেন্দ্র ও রাজ্যকে বার্তা দিতে গত সেপ্টেম্বরে খেমাশুলিতে ‘রেল টেকা’ ও কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়কে ‘ডহর ছেঁকা’ হয়েছে। এবার হবে ‘খেমাশুলি পার্ট-২’। সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠানোর দাবিতে জঙ্গলমহল জুড়ে সেই আন্দোলন হবে মূলত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। কুড়মিদের ওই সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, রেল ও জাতীয় সড়ক বাদ দিয়ে এবার রাজ্যের রাস্তাগুলিতে ‘ডহর ছেঁকা’ হবে।
গত বছর ‘ছোটনাগপুর টোটেমিক কুড়মি/কুরমি মাহাতো সমাজ’ নামে একটি মঞ্চ গঠন করে ২০-২৪ সেপ্টেম্বর খেমাশুলিতে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ হয়েছিল। মূলত, আদিবাসী কুড়মি সমাজ এবং কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ মিলিত ভাবে ওই অবরোধ কর্মসূচি করেছিল। আরও কয়েকটি কুড়মি সংগঠন আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। এবার একক ভাবে রাজেশের সংগঠনটি রাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কুড়মি সংগঠনের এমন সিদ্ধান্তে অস্বস্তি শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর কটাক্ষ, ‘‘কুড়মি সংক্রান্ত সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট এখনও রাজ্য বিধানসভায় পাশ করানোই হয়নি। কেন্দ্রের কাছে পাঠানো তো দূরঅস্ত!’’ ঝাড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলছেন, ‘‘সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। আদিবাসীদের সারনা ধর্মের কোড চালুর জন্যও বিধানসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে তো কেন্দ্রের তরফে উচ্চবাচ্য নেই। ওরাই ভোটের রাজনীতি করে।’’ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা রাজ্য তৃণমূলের সহ সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো বলছেন, ‘‘কুড়মিদের দাবির প্রতি রাজ্য সরকার বরাবরই সহানুভূতিশীল। সংশোধিত সিআরআই রিপোর্টের বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
প্রসঙ্গত, কুড়মিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে রাজ্য সরকার সিআরআই রিপোর্ট পাঠিয়েছিল। কিন্তু ওই রিপোর্ট খারিজ করে দিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য সহ সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট চেয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সেই রিপোর্ট আজও পাঠানো হয়নি বলে কুড়মি সংগঠনগুলির অভিযোগ। রাজ্যের এই গড়িমসি নিয়ে জেলা কংগ্রেস নেতা সুব্রত ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘কুড়মিদের স্বপক্ষে রিপোর্ট পাঠালে বাকি জনজাতি সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্কে ক্ষতির আশঙ্কা করেই হয়তো এই গড়িমসি করা হচ্ছে।’’