দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালে এই মাটির উনুনেই রোগীদের খাবার রান্না হয়। নিজস্ব চিত্র
গ্যাস নয়। কোথাও রান্না হয় মাটির উনুনে। রোগীর সংখ্যা কম থাকলে কোথাও আবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা হাসপাতালে রান্না করেন না। বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন রান্না করা খাবার। আর স্বাস্থ্যবিধি! রোগীদের জন্য তৈরি খাবার ঢেকে রাখার অভ্যাস তৈরি হয়নি অনেক স্বাস্থ্যকর্মীরও। জেলার অধিকাংশ গ্রামীণ হাসপাতালের হেঁশেলের অন্দরমহলের ছবি এটাই।
রোগীদের একাংশের অভিযোগ, মাঝেই মাঝেই দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নাকি রান্না হয় না। সম্প্রতি ওই হাসপাতালে গিয়েও জানা গেল, ওই দিনও রান্না হয়নি সেখানে। হাসপাতালের রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠী এক কর্মী নাসিমা বিবি বললেন, “রোগী কম। তাই বাড়ি থেকেই খাবার তৈরি করে এনেছি।” অথচ নিয়ম হল, রোগীর সংখ্যা যাই হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেই রোগীদের খাবার রান্না করতে হবে। এবং সেই রান্না হবে স্বাস্থ্যবিধি এবং রোগীর অবস্থা বুঝে। কেন এমন হল? দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ সুদীপ্ত ঘোড়ুইয়ের ব্যাখ্যা, “রোগী কম থাকলেও হাসপাতালেই রান্না হয়। এ দিন কেন করা হল না জানতে চাইব।”
জেলায় ২১টি গ্রামীণ স্তরের এবং একটি ব্লক স্তরের হাসপাতাল রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, সাধারণত একশো শয্যার হাসপাতালগুলিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাই রান্নার দায়িত্বে থাকেন। অভিযোগ, হাতে গোনা কয়েকটা গ্রামীণ হাসপাতালে গ্যাসে রান্না হলেও বেশিরভাগই হয় কয়লা পুড়িয়ে অথবা কাঠের জ্বালে। এই সব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি তো দূর অস্ত অনেকক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও বালাই থাকে না।
অভিযোগ, নজরদারির অভাবে গ্রামীণ হাসপাতালের রান্নাশালায় নিয়ম করে দু’বেলা ঝাঁটা পড়ে না। বাসনপত্র পরিষ্কার করে মাজা হয় না। শুধু তাই নয়। যাঁরা রান্না করেন তাঁরাও যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন থাকেন না। হেঁশেলে বড় বড় ফাটল। পোকামাকড় ঘুরে বেড়ায়। গোয়ালতোড় গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ প্রসেনজিৎ দাস মানলেন, “হাসপাতালের রান্নাঘরের পরিকাঠামোর নানা সমস্যা আছে।” নিয়ম হল, যাঁরা রান্না করেন তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি। রোগীদের খাবার পরিবেশনের সময় নির্দিষ্ট পোশাক পরে থাকতে হবে। অবশ্যই মাথা ঢাকা রাখতে হবে। অভিযোগ, জেলার গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে সব ক্ষেত্রে এমন নিয়ম মানা হয় না। মাথা ঢাকা তো দূর অস্ত, রোগীদের পরিবেশন করা খাবারও বহু ক্ষেত্রে খোলা পড়ে থাকে।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসকদের নির্দেশ ছাড়া বাইরের খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ। অথচ অভিযোগ, বেশিরভাগ গ্রামীণ হাসপাতালের রোগীরা দোকান থেকে কেনা খাবার খান। কোথাও কোনও নজরদারিও হয় না। ফলে সাবির্ক ভাবে রোগীর স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি অবহেলিত থেকে যায়।
রোগীদের খাবার নিয়ে এত সমস্যা কেন? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানলেন, “জেলার বেশ কিছু গ্রামীণ হাসপাতালের রান্নাঘর ও সংশ্লিষ্ট অন্য সমস্যা আছে। দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”