পদ্ম-ঘাসফুলে দ্বন্দ্ব কাঁটা, প্রচারে জোটের কমিটি

প্রদীপে কি আঁধার ঘুচবে

শহরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে অবশ্য প্রার্থী ঘিরে ক্ষোভ স্পষ্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৫
Share:

সক্রিয়: তিনি খড়্গপুরের পুরপ্রধানও। ছটপুজোর আগে খড়্গপুরের মন্দিরতলা পুকুরঘাট ঘুরে দেখলেন প্রদীপ সরকার। নিজস্ব চিত্র

খড়্গপুর পুনরুদ্ধার যে পাখির চোখ সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন খোদ দলনেত্রী। উপ-নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকেই হাওয়ায় ভাসছিল পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের নাম। সেই প্রদীপকেই প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরে তৃণমূলের অন্দরের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট, লড়াই যতটা বাইরে, তেমন দলের ভিতরেও। ফলে, কঠিন আসনে প্রার্থী ‘কাঁটা’ থেকেই গেল শাসকদলে।

Advertisement

খড়্গপুর শহরে তৃণমূলের কোন্দল নতুন নয়। এখানে দলের পাঁচ ‘মাথা’। উপ-নির্বাচনে যাতে তার প্রভাব না পরে তার জন্য কালীঘাটে সেই পাঁচ নেতাকে ডেকে ঐক্যের নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে চলেছে জনমত সমীক্ষা। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে শহরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের নাম উপ-নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। তার পরেই শহরে তৃণমূলের প্রদীপ বিরোধী শিবিরে ক্ষোভের সুর শোনা গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কোন্দল কাঁটার কথা কার্যত স্বীকার করেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “রাজনৈতিক খিদে অন্যায় নয়। প্রার্থীকে নিয়ে কারও মনে যেটুকু মতপার্থক্য রয়েছে সেটা কাটাতে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে বসে রণকৌশল ঠিক করা হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, খড়্গপুরের মানুষ বিজেপিকে পছন্দ করছেন না। অন্য দলের তুলনায় তৃণমূলে মতপার্থক্য কম।

জেলা নেতৃত্ব এমন কথা বললেও শহরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে অবশ্য প্রার্থী ঘিরে ক্ষোভ স্পষ্ট। এ বার উপ-নির্বাচনে প্রদীপের সঙ্গেই তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছিল দেবাশিস চৌধুরীর নাম। শহরের রাজনীতিতে একসময়ে দেবাশিস অনুগামী বলে পরিচিত প্রদীপ ২০১৫ সালের পুর নির্বাচনে জিতে খড়্গপুরের পুরপ্রধান হন। তখন থেকেই দেবাশিসের সঙ্গে তাঁর দূরত্বের শুরু। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাইরের প্রার্থী দেওয়া নিয়ে দেবাশিস অনুগামীরা বিদ্রোহ করলেও প্রদীপ ওই প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। জিতেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তারপরে লোকসভা ভোটেও দ্বন্দ্ব মেটাতে বার্তা দিয়েছিলেন খোদ তৃণমূলনেত্রী। শহরের পাঁচ নেতার মধ্যে তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি জহরলাল পাল ও উপ-পুরপ্রধান শেখ হানিফ থেকেছেন প্রদীপের পাশে। আর দেবাশিস পাশে পেয়েছেন তৃণমূলের শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডেকে। সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া পড়ে লোকসভা ভোটেও। শুধু রেল শহরেই ৪৫ হাজার পিছিয়ে যায় তৃণমূল।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’দিন ধরে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার সদস্যরা প্রার্থী নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন। প্রদীপের নাম ঘোষণার পরে উপ-পুরপ্রধান শেখ হানিফ বলেন, “এতদিন জামাইদের প্রার্থী করা হচ্ছিল। আমরা বলেছিলাম জামাই নয়, ঘরের ছেলেকে প্রার্থী করতে হবে। দল কথা রেখে প্রদীপ সরকারকে প্রার্থী করেছে। আমাদের জয় নিশ্চিত।” তৃণমূলের শহর কার্যকরী সভাপতি জহরলাল পালের দাবি, “দল গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসাবে পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারকে বাছাই করায় আমরা খুশি। আমাদের পুরবোর্ডের উন্নয়নকে সামনে রেখেই জয়ী হব।”

ঠিক উল্টো সুর শোনা গিয়েছে দেবাশিস শিবিরে। দেবাশিস অনুগামী বলে পরিচিত শহরে এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, “মুনমুনদা (দেবাশিস) কখনও দলকে মিথ্যা বুঝিয়ে প্রার্থী হতে চায়নি। তাই আক্ষেপ থাকলেও প্রার্থী নয়, দলের জন্য প্রচার চালাব। ফল কী হবে সেটা তো সময় বলবে!” প্রদীপের প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে দেবাশিসের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, ‘‘“দল প্রার্থী করেছে। দল বুঝবে। আমি কোনও মন্তব্য করব না।” তবে তৃণমূলের শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে অবশ্য বলছেন, ‘‘আমার কাছে ব্যক্তি বড় বিষয় নয়। দলের হয়েই কাজ করব। লড়াই করব।”

তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে দলের অন্দরেই এমন বিষাদের সুরে উচ্ছ্বসিত বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “তৃণমূল তো এই শহরে হেরেই আছে। এ বার প্রার্থী নিয়ে কোন্দলে তৃণমূল মুখ থুবড়ে পড়বে।” কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস ঘোষের দাবি, ‘‘খড়্গপুর তৃণমূলের নয়, বরাবর কংগ্রেসের ছিল। এ বার প্রার্থীকে নিয়ে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বে আমরা সুফল পাব।’’

প্রদীপ অবশ্য জয় নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, “দিদি আমাকে প্রার্থী করেছেন। আমি ওঁকে খড়্গপুর উপহার দেব।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমাদের দলে কোনও কোন্দল নেই। যাঁরা কোন্দল সৃষ্টি করতে চান, তাঁরা প্রকৃত তৃণমূল নন। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে আমরা একসঙ্গে বিজেপিকে প্রতিহত করে জয়ী হব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement