চলছে চাকরির দাবিতে নকল ফর্ম পূরণ। নিজস্ব চিত্র
দীপ দাশ। নন্দনায়েকবাড় অঞ্চলের ২৮ বছরের তরতাজা এই যুবক এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন।
ভেকুটিয়া অঞ্চলের বাসিন্দা প্রদীপ কুমার ভুঁইয়া। বছর উনত্রিশের এই যুবক সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। সঙ্গে রয়েছে বিএড, ডিএলএড এবং কম্পিউটার ডিপ্লোমা।
নন্দীগ্রামের পৃথক এলাকার বাসিন্দা হলেও এঁরা জুড়েছে গিয়েছেন কর্মহীনতার হতাশায়।
শুধু দীপ কিবা প্রদীপ নন। তাঁদের মতো কয়েক হাজার বেকার যুবক-যুবতী কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার যোগ দিলেন বামেদের কর্মসূচিতে। নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সীতানন্দ কলেজের সামনে ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন বা ডিওয়াইএফ-এর তরফে এই কর্মসূচিতে এ দিন চাকরির দাবি জানিয়ে নকল ফর্ম পূরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হল। এলাকার বহু বেকার যুবক-যুবতী কাজ চেয়ে পূরণ করলেন নকল ফর্ম। একদা জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে কাজের দাবিতে বামেদের কর্মসূচি ঘিরে যুবক-যুবতীদের উৎসাহ জল্পনা বাড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বস্তুত, দীর্ঘ ৮ বছর পরে নন্দীগ্রামে এমন প্রকাশ্য কর্মসূচি করল বামেরা।
২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে বামেদের হারিয়ে রাজ্যে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পিছনে অন্যতম প্রধান অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছিল নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন। ইতিমধ্যে কেটে গিয়েছে আটটা বছর। জমি আন্দোলনে যে নন্দীগ্রামের মানুষ শিল্পের জন্য জমি দিতে নারাজ ছিলেন, সেই নন্দীগ্রামেরই শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা এখন কাজের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। ২০০৭-’০৮ সালে জমি আন্দোলনের সময় এখানকার মানুষের অভিযোগ ছিল বামেদের বিরুদ্ধে। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর বামেদের সেরকম কোনও বড় কর্মসূচি নন্দীগ্রামে হয়নি। কর্মসূচি দূরের কথা, এতগুলো বছর ধরে তাদের দলীয় কার্যালয়ই বন্ধ ছিল এখানে। আট বছর পর লোকসভা নির্বাচনের মুখে তালা খোলে সেই কার্যালয়ের। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ফের তালা পড়ে তাতে। যার জন্য শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে গুণ্ডামির অভিযোগ তুলেছিল বামেরা। এ বার সেই বাম যুব সংগঠনের কর্মসূচিতেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিতে দেখা গেল বেকার যুবক-যুবতীদের।
ডিওয়াইএফ-সহ বামেদের ১২টি গণ সংগঠনের আগামী ১২ ও১৩ সেপ্টেম্বর নবান্ন অভিযান কর্মসূচি রয়েছে। তার আগে বেকার যুবক-যুবতী ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে নকল ফর্ম ফিলাপ-এর কর্মসূচি চলছে প্রতি জেলায়। ডিওয়াইএফ-এর রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র বলেন, ‘‘আট বছর আগে আমরা চেয়েছিলাম নন্দীগ্রামে শিল্প আসুক। তাতে কর্মসংস্থান হত। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ আর তৃণমূলের আঁতাতে সেই চেষ্টা সফল হয়নি। আজ, তৃণমূলের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতী আমাদের কর্মসূচিতে এসেছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যে প্রচুর কর্মসংস্থান হয়েছে বলে দাবি করেছে তৃণমূল। কিন্তু আমাদের কর্মসূচিতে বেকারদের যোগদানেই বোঝা গিয়েছে তৃণমূলের সেই দাবি ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। সাধারণ মানুষই তৃণমূলকে এর যোগ্য জবাব দেবে।’’
এ প্রসঙ্গে নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ও তৃণমূল নেতা আবু তাহের বলেন, ‘‘কর্মসংস্থান হয়নি, এটা মিথ্যা কথা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর বহু মানুষ কাজ পেয়েছেন। মানুষের জন্য কাজ করাই আমাদের উদ্দেশ্য। রাস্তাঘাটে নকল ফর্ম ফিলাপ করে কিছু প্রমাণ করা যায় না।’’
নন্দীগ্রামে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রলয় পাল বলেন, ‘‘দেশজুড়ে এখন বিজেপির স্রোত। রাজ্যে বিজেপিকে রুখতে গেলে তৃণমূলকে বামেদের সঙ্গে জোট বাঁধতেই হবে। বিজেপিকে আটকাতে তাই বামেদের রাস্তা করে দিচ্ছে তৃণমূল।’’
জমি আন্দোলন পর্বে শিল্পের থেকে মুখ ফিরিয়েছিল নন্দীগ্রাম। রাজ্যে পালাবদলের সূচনাও ওই মাটি থেকেই। কর্মহীনতার হতাশায় সেই নন্দীগ্রামেই কি এখন অন্য সুর!