মঞ্চে: গায়িকা ইন্দ্রাণী মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র।
সিকিমের কুয়াশা মোড়া পরিবেশে মৃদু বোলে তাল তোলে দিম্ফু। দু’দিকে চামড়ায় মোড়ে চাকতির মতো ওই বাদ্য পাহাড়ি রাজ্যের মনের বোল বলে। এ বার সেখানে বোল উঠবে ধামসা-মাদলেও। সঙ্গে অন্য এক জঙ্গলমহলের পাহাড়িয়া সুর— ঝুমুর।
সিকিমের পাসিংডাং এবং সিঙ্গিক-এ আয়োজিত সীমান্ত এলাকা অনুষ্ঠানে (বর্ডার এরিয়া প্রোগ্রাম-সিকিম ২০১৭) পরিবেশিত হবে ঝুমুর গান। সে জন্য জঙ্গলমহলের সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতোকে নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ নর্থ ইস্ট জোন কারচারাল সেন্টার। আজ বুধবার ও কাল বৃহস্পতিবার সিকিমের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ইন্দ্রাণী ও তাঁর সম্প্রদায়। দলে রয়েছে ১৫ জন সদস্য। তার মধ্যে ছ’জন ধামসা, মাদল, ঢোল ও হারমোনিয়াম শিল্পী। আছেন আট জন নৃত্যশিল্পীও।
যে কোনও লোক সঙ্গীতেই লুকিয়ে থাকে স্থানীয় মানুষের সুখ-দুঃখের কাহিনী। ঝুমুরও জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের বারোমাস্যা। মূলত কুড়মালি ভাষায় বাঁধা হয় সেই গান। ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল এলাকার জনপ্রিয় সঙ্গীত অবশ্য উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের কাছে একেবারেই অপরিচিত।
সিকিমের মানুষের জন্য নিজের দেশের গান গাইতে পারবেন জেনে উচ্ছ্বসিত ইন্দ্রাণী। তাঁর গান এর আগে শুনেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সে দেশের রংপুর ও সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠান করেছেন ইন্দ্রাণী। গান গেয়েছেন বাংলাদেশ রেডিওতেও। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নয়াদিল্লিতে সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানেও ঝুমুর গানের গেয়েছেন তিনি।
নব্বই দশকের শেষ দিকে ইন্দ্রাণী ও লক্ষ্মীকান্ত মাহাতোর কণ্ঠে ‘আমার নাকফুলটা হারাঞ গেল কলাবনির বনে’— খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। সে সুর এ বারও শোনা যেতে পারে সিকিমের মঞ্চে। ইন্দ্রণী শুধু গায়িকা নন, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অর্থ সাহায্যে রাঢ়ভূমের লোকগান ও লোকবাদ্যযন্ত্র নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের জীবনচর্যার গানকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যাওয়ার জন্য লড়াইও চলছে। ফলে সিকিমের অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁর উচ্ছাসও লুকিয়ে রাখেননি তিনি। আর তা নিয়েই আশাবাদী ঝুমুরশিল্পী মহল।