মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় জায়গা জঙ্গলমহল। সেই জঙ্গলমহলের ৮টি ব্লককে নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে গঠিত হচ্ছে ৩০২৪.৩৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা। আজ, মঙ্গলবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের মাঠে প্রশাসনিক সভার মঞ্চ থেকে ঝাড়গ্রাম জেলার সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এমন মুহূর্তের সাক্ষী থাকার জন্য রাজ্য প্রশাসন ও ঝাড়গ্রাম পুরসভার তরফে সর্বসাধারণকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের দাবি, এমন চোখ ধাঁধানো আয়োজন আগে দেখেননি জঙ্গলমহলবাসী। পূর্ত দফতরের আধিকারিকরাও জানাচ্ছেন, গত ছ’বছরে জঙ্গলমহল তথা রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী যত প্রশাসনিক সভা করেছেন, এই সভাস্থল ছাপিয়ে গিয়েছে সকলকে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভার জন্য রাজ কলেজের মাঠে ২ লক্ষ ৩২ হাজার ৫০০ বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে বাঁশ, ত্রিপল ও কাপড়ের ছাউনি দেওয়া নীল-সাদা রঙের সভাস্থলটি তৈরি হয়েছে। মূল মঞ্চটি ১ হাজার ৯২০ বর্গফুটের। মূল মঞ্চের পিছনে রয়েছে ৯৬০ বর্গ ফুটের অ্যান্টি চেম্বার। মূল মঞ্চে গোটা দশেক স্ট্যান্ড এসি মেশিন বসানো হয়েছে। অ্যান্টিচেম্বারে রয়েছে আরও ৬টি স্ট্যান্ড এসি মেশিন। মূল মঞ্চের সামনে ১৬ ফুট তফাতে ৯৬০ বর্গফুটের সাংস্কৃতিক মঞ্চ। ওই মঞ্চে আদিবাসী লোকসংস্কৃতির সঙ্গীত ও নৃত্যানুষ্ঠান হবে। সভাস্থলে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের মাটিতে বসার ব্যবস্থা থাকছে। গোটা সভাস্থলে গরমের হাত থেকে দর্শকদের রেহাই দেওয়ার জন্য ৭৬০টি সিলিং ফ্যান লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া স্ট্যান্ড ফ্যানও থাকছে কয়েকশো। সভাস্থলে ৬১২টি মেটাল লাইট লাগানো হয়েছে। মূল মঞ্চটি ফুল ও কাঠের প্যানেল দিয়ে সাজানো হয়েছে। মূল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েকজন মন্ত্রী, জন প্রতিনিধি, আমলা ও বিশিষ্টজনের বসার ব্যবস্থাও থাকছে। মঞ্চের বাঁদিকে দু’টি সারিতে পাঁচশো উপভোক্তা ও পাঁচশো ভিআইপি-র বসার চেয়ার থাকছে। ঝাড়গ্রাম জেলার সূচনা করার পরে মুখ্যমন্ত্রী ১১০টি প্রকল্পের শিলান্যাস ও ১১৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। সভাস্থলের শেষ প্রান্তে থাকা দর্শকরাও যাতে অনুষ্ঠান দেখতে পান, সে জন্য সভাস্থলের ভিতরে ১২টি জায়ান্ট-স্ক্রিন লাগানো হয়েছে।
জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, অনুন্নত এলাকার সুংসহত উন্নয়নের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিম অংশকে নিয়ে আলাদা জেলা করা হোক। প্রায় দু’শো বছরেরও বেশি আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে এই এলাকাটি পৃথক ‘জঙ্গলমহল জেলা’র অধীনে ছিল। আদিবাসী-মূলবাসী অধ্যুষিত এই এলাকার জীবনধারা, ভাষা, সংস্কৃতির পরম্পরা পশ্চিম মেদিনীপুরের অন্যান্য এলাকা থেকে অনেকটাই আলাদা। ফলে, এলাকার মানুষের মনে স্বশাসন অথবা আলাদা জেলার সুপ্ত দাবি ছিলই।
মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুর, ব্যারাকপুর, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, নদিয়া, বর্ধমান জেলা থেকে বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসারদের নিয়ে আসা হয়েছে। কনস্টেবল ও হোমগার্ড মিলিয়ে ২ হাজার জন এবং আরও ২ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকছে। ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান তথা ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকার জন্য গোটা ঝাড়গ্রাম জুড়ে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।”