ঝাড়গ্রাম পৌরসভা। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন নিগমের (সুডা) অধিকর্তাকে নাগালে পেয়ে ঝাড়গ্রামের পুর পরিষেবার অব্যবস্থতা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তৃণমূলের একাংশ পুরপ্রতিনিধি। সুডা-র অধিকর্তার কাছে পাল্টা অভিযোগ করলেন পুরপ্রধান কবিতা ঘোষ। তাঁর দাবি, পুরপ্রতিনিধি ও পুর-কর্মীদের সহযোগিতা না মেলায় উন্নয়নে বিলম্ব হচ্ছে। এমন ঘটনায় ঝাড়গ্রাম পুরসভায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এসেছে।
শুক্রবার ঝাড়গ্রামের একটি রিসর্টে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৩টি পুরসভা কর্তৃপক্ষকে নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেন রাজ্য নগরোন্নয়ন নিগমের (সুডা) অধিকর্তা জলি চৌধুরী। ওই বৈঠকের পর ঝাড়গ্রাম শহর তৃণমূলের সভাপতি তথা পুরপ্রতিনিধি নবু গোয়ালা, পুরপ্রতিনিধি অজিত মাহাতো, সোনা মল্ল-রা পুরপ্রধান কবিতা ঘোষের উপস্থিতিতেই ‘সুডা’-র অধিকর্তার কাছে ঝাড়গ্রাম শহরের অপরিচ্ছন্ন অবস্থা, বেহাল রাস্তা ও নিকাশি-সহ বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সূত্রের খবর, এরপরই ‘সুডা’র-অধিকর্তার কাছে পুরপ্রধান অভিযোগ জানান, পুরপ্রতিনিধিরা একশো শতাংশ সাহায্য করছেন না। ফলে পুরকর্মীরাও সময়ের কাজ সময়ে করতে পারছেন না। এরপরই জেলাশাসকের দফতরে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীদের আলোচনায় ডাকেন ‘সুডা’র অধিকর্তা। তিনি পুরপ্রধানকে প্রতি মাসে পুরসভার পর্যালোচনা বৈঠক করতে বলেন। তিনি জানান, এ ধরনের পর্যালোচনা বৈঠক করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কাজের গতিও বাড়বে।
২০২২ সালে তৃণমূলের নতুন পুরবোর্ড গঠিত হয়। গোড়া থেকেই শাসকদলের একাংশ পুরপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পুরপ্রধানের বনিবনা নেই। শাসকদলের একাংশ পুরপ্রতিনিদের অভিযোগ, তাঁদের কোনও গুরুত্ব না দিয়ে পুরপ্রধান একতরফা সিদ্ধান্ত নেন। পুরসভার ১৮ জন পুরপ্রতিনিধির মধ্যে ১৭ জন তৃণমূলের। অথচ গোড়ার দিকে পুরবোর্ডের বৈঠকে তৃণমূলের অধিকাংশ পুরপ্রতিনিধি গরহাজির থাকায় বৈঠকে ‘কোরাম’ হতো না। কোনও সিদ্ধান্তও নেওয়া যেত না। সূত্রের খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর থেকে হস্তক্ষেপ করার পর পুরবোর্ডের বৈঠকে শাসকদলের গরিষ্ঠ সংখ্যক পুরপ্রতিনিধি উপস্থিত হচ্ছেন। শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রতি ওয়ার্ডে একাধিক সাফাই কর্মী নিয়োগ করতে বলেছিলেন। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাফাই কর্মীরা কাজ করেছিলেন। কিন্তু মাসিক মজুরি অনিয়মিত মেলায় অনেক ঠিকা-সাফাই কর্মী আর কাজ করছেন না।
শহর তৃণমূলের সভাপতি তথা ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি নবু গোয়ালা বলছেন, ‘‘তিন বছর আমরা পুর বোর্ডের ক্ষমতায় রয়েছি। অথচ রাস্তা, নিকাশি ও জঞ্জাল অপসারণের কাজ হচ্ছে না বলে সুডা অধিকর্তাকে জানানো হয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এখন ব্যর্থতা ঢাকতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানিয়ে পুরপ্রতিনিধি ও পুরকর্মীদের ঘাড়ে দায় চাপানো হচ্ছে। আমাদের তো গুরুত্বই দেওয়া হয় না।’’ পুরপ্রধান কবিতার পাল্টা দাবি, ‘‘পুর পরিষেবার জন্য কার্যত একক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। বেশ কয়েকটি রাস্তার কাজ হয়েছে। বাকি রাস্তাগুলির বরাদ্দের অনুমোদন পেলে কাজ হবে। সহযোগিতা না পেলে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে হবে কী ভাবে! সব সময় আমার নামে অভিযোগ করা হয়।’’