ছবি এঁকে জাপান জয় ঝাড়গ্রামের নাসিমের

প্রথাগত নিয়মের বেড়াজালে অনেক সময় হারিয়ে যায় শিশুদের মনের রঙ। অভিভাবকদের প্রত্যাশার পাহাড় চূড়োয় উঠতে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত হয় কচি মন। ঝাড়গ্রামের আট বছরের শেখ নাসিমের ক্ষেত্রে উল্টোপথে হেঁটেছেন অভিভাবকরা। অভাবের সংসারে আঁকা শেখার বিলাসিতা করার সুযোগ পায়নি নাসিম।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৫ ০০:৩০
Share:

এই ছবি এঁকেই বিশ্বজয় নাসিমের।

প্রথাগত নিয়মের বেড়াজালে অনেক সময় হারিয়ে যায় শিশুদের মনের রঙ। অভিভাবকদের প্রত্যাশার পাহাড় চূড়োয় উঠতে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত হয় কচি মন। ঝাড়গ্রামের আট বছরের শেখ নাসিমের ক্ষেত্রে উল্টোপথে হেঁটেছেন অভিভাবকরা। অভাবের সংসারে আঁকা শেখার বিলাসিতা করার সুযোগ পায়নি নাসিম। তবে রঙ-পেন্সিল দিয়ে মনের রঙে নাসিমের ছবি আঁকায় বাধা দেননি অভিভাবকরা। শিশুমনের কল্পনার দ্বিমাত্রিক রঙে নিজের মতো করেই ছবি আঁকে ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুর কিরণবালা গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড ফ্রি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর এ পড়ুয়া। গত বছর স্কুলে আঁকার এক কর্মশালায় মনের রঙে গাঢ় কমলা ও গাঢ় নীল রঙের আকাশ-নদী একেছিল সে। মাঝখানে ছিল হলুদ রঙের নৌকো। রঙিন যাত্রাপথের সেই বিমূর্ত ছবিই নাসিমকে এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

Advertisement

শনিবার বিকেলে স্কুল ছুটির পরে এক অনুষ্ঠানে নাসিমকে সংবর্ধনা দিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিদের পাশাপাশি, ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে নাসিমের উদাহরণ দিয়ে শিশুদের নিজের মতো করে ভাবতে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আবেদনও জানালেন শিক্ষা দফতরের আধিকারিক ও বিশিষ্টজনরা।


শেখ নাসিম

Advertisement

অরণ্যশহরের ডিএম হল এলাকার বাসিন্দা নাসিমের বাবা শেখ জয়নাল আবেদীন ভিন রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ঝাড়গ্রামের বাড়িতে দাদু, ঠাকুমা, মা ও স্কুল পড়ুয়া দিদির সঙ্গে থাকে নাসিম। দাদুও পেশায় রাজমিস্ত্রি।

স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানালেন, গত বছর অক্টোবরে স্কুলে আঁকার কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। অন্যান্য পড়ুয়াদের সঙ্গে খুব উৎসাহ নিয়ে যোগ দিয়েছিল নাসিম। বন্ধুরা কেউ এঁকেছিল গ্রামের ছবি, কেউ পাহাড়ের আবার কেউ বা শহরের। আর নাসিম এঁকেছিল এমন একটা ছবি যার সঙ্গে বাস্তবের খুব একটা মিল নেই। সেখানে আকাশ, নদী, গাছ, নৌকো সবই যেন অন্য রকমের। এই কর্মশালা থেকে নির্বাচিত কয়েকটি ছবি পাঠানো হয়েছিল জাপানের ৪৫তম আন্তর্জাতিক শিশু চিত্র প্রদর্শনীতে। জাপানের সেই প্রতিযোগিতায় ৩৮টি দেশের ৪০ হাজার শিশুর আঁকা ছবি জমা পড়েছিল। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার ছিল ‘সুপ্রিম গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’। সম্প্রতি জাপান সরকার বিজয়ী ছবির তালিকা প্রকাশ করে। দেখা যায় ভারতের পাঁচ জন এই পুরস্কার পেয়েছে। আর ঝাড়গ্রামের এই স্কুল থেকে পুরস্কারের একমাত্র প্রাপক নাসিম। প্রদর্শনীর আয়োজক জাপানের ‘ফাউন্ডেশন অফ আর্ট এডুকেশন’ নাসিমের ছবির একটি নাম দিয়েছে, ‘দ্য জার্নি’। সম্প্রতি জাপান থেকে ডাকযোগে স্কুলে এসে পৌঁছয় নাসিমের পদক-পুরস্কার ও শংসাপত্র।

শনিবার স্কুলে সংবর্ধনাসভায় নাসিমের গলায় সেই গোল্ড প্লেটেড মেডেল পরিয়ে দিলেন স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা স্কুলের সভাপতি কবিতা ঘোষ। ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক শিক্ষা) শুভাশিস মিত্র, অবর প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক (ঝাড়গ্রাম পশ্চিমচক্র) প্রকাশ সরকার প্রমুখ। কাউন্সিলর কবিতাদেবী বলেন, “প্রত্যেক শিশুর মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। নাসিম সেটা প্রমাণ করেছে।” স্কুল পরিদর্শক শুভাশিসবাবু ও প্রকাশবাবুর কথায়, “আমরা ছোটদের মধ্যে সব কিছুর একটা মানদণ্ড ঠিক করে দিই। কিন্তু শিশুকে নিজের মতো ভাবতে দিলে সে তার মনের রঙেই সব কিছু করতে পারে। সেটাই জীবনের প্রকৃত যাত্রাপথের আনন্দগান।”

নাসিমের জন্য গর্বিত তার সহপাঠী সায়ক মজুমদার, সাঁওতা মুর্মু, ঐন্দ্রিলা মিদ্যা, প্রতীতী মাহাতোরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।

নাসিমের মা নূরজাহান বিবি বলেন, “ছেলের আঁকা ছবি দেখে আগে অবাক হতাম। এখন আর হই না। বুঝেছি, সন্তানের স্বাভাবিক ভাবে বড় হয়ে ওঠার জন্য তার মনের রঙ ফিকে হতে দেওয়া যাবে না।”

নাসিমের কথায়, “ভেবে কিছু করি নি। যেমন মনে হয়েছে তেমন রঙ করেছিলাম


ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement