উজ্জ্বল: আলোর সাজে মেদিনীপুরের জগন্নাথ মন্দির এলাকা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
কোথাও থিমের মণ্ডপ, আলোর রোশনাই, কোথাও প্রতিমার নজরকাড়া সাজ। জগদ্ধাত্রী পুজোয় জাঁকজমক কম থাকত না মেদিনীপুরে। করোনা আবহে এ বার সে সব ফিকে। প্রায় সব পুজোরই জাঁক কমেছে। যেখানে প্রচুর আলোকসজ্জা থাকত, সেখানে এ বার অল্প আলো দেওয়া হয়েছে, যেখানে বড় প্রতিমা হত, সেখানে প্রতিমার উচ্চতা কমানো হয়েছে।
দুর্গাপুজো, কালীপুজোর পরে জগদ্ধাত্রীপুজো ঘিরে এখন উৎসবমুখর শহর। রবিবার ছিল অষ্টমী। পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়েছে সেই ষষ্ঠী থেকেই। রবিবারও একাধিক পুজোর উদ্বোধন হয়েছে। এক সময়ে বেশিরভাগ সর্বজনীন পুজো নবমীর দিনেই হত। এখন সপ্তমী থেকেই পুজো শুরু হয়। মেদিনীপুর শহর, শহরতলিতে এখন সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। দর্শকদের নজর কাড়তে সকলেই পুজোর আয়োজনে নতুন কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করতেন। ভিড় টানতে বাহারি আলোকসজ্জা থাকত প্রায় সব জায়গায়। এ বার আলোকসজ্জা যে নেই তা নয়। তবে অন্যবারের থেকে অনেক কম। অন্যান্য বছর জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজনে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার যে লড়াই চলে এ বার তা-ও নেই।
শহরের পঞ্চুরচকের পুজোর উদ্যোক্তাদের তরফে প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী, বুদ্ধ মণ্ডলরা বলছেন, ‘‘এ বারও থিমের মণ্ডপ হয়েছে। তবে অন্য অনেক আয়োজনে কাটছাঁট করা হয়েছে। করোনা-বিধি মেনেই আমরা পুজোর আয়োজন করেছি। ভিড় নিয়ন্ত্রণে বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়েছে।’’ জাঁক কমার ছবি চোখে পড়েছে শহরতলিতেও। মেদিনীপুর শহরতলির খয়েরুল্লাচকে ধুমধাম করে জগদ্ধাত্রী পুজো হত। এ বার ততটা ধুম নেই। এখানকার এক পুজোর উদ্যোক্তাদের তরফে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘পুজো হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতির জন্য এ বার তেমন জাঁকজমক করা হয়নি। আমরা সে ভাবে চাঁদাও তুলিনি। নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলেই পুজোর আয়োজন করেছি।’’
শহর, শহরতলির বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তারাই জানাচ্ছেন, করোনা আবহে স্বাস্থ্যবিধির উপরেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যতটা সম্ভব মণ্ডপ খোলামেলা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। পুলিশ- প্রশাসনও জানিয়েছিল, মণ্ডপের চারপাশ খোলা রাখতে হবে। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, সিঁদুরখেলায় ভিড় এড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। শহরের জেলা পরিষদ রোডের পুজোর উদ্যোক্তাদের তরফে অরুণ ঘোষ বলছিলেন, ‘‘পুজোর সময় এ বার আলাদা করে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না।’’
জাঁক কমলেও জগদ্ধাত্রী পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে মেদিনীপুর। যে সব পুজো আজ, সোমবার হবে, সেখানের মণ্ডপে রবিবার চলেছে শেষ মুহূর্তের কাজ। পুজো দেখতে রাস্তায় নেমে পড়েছেন মানুষও। একাধিক পুজোর উদ্যোক্তারা শুনিয়ে রাখছেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জেরে এ বার নেহাতই সাদামাটা মণ্ডপ- প্রতিমা হয়েছে। পরের বছর কিন্তু বড় করে পুজো হবে।’’