হারানিধি: ছেলে কোলে বাড়ির পথে সুমিত্রা। মঙ্গলবার মেদিনীপুর মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র
প্রসূতি ও শিশু বিভাগের ভবন ‘মাতৃমা’ রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উত্তরদিকে। এখানের এক ওয়ার্ডেই ছিলেন সুমিত্রা খামরই ও তাঁর সদ্যোজাত শিশুপুত্র। সেখানে ঢুকে শিশুটি চুরি করে কী ভাবে পালাল সুলতানা বিবি? ঘটনার পিছনে কী কোনও দুষ্টচক্র রয়েছে? হাসপাতালের কেউ কি অভিযুক্ত মহিলাকে সহযোগিতা করেছেন? আপাতত এই উত্তরগুলিই খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারের আশ্বাস, ‘‘মেদিনীপুরের ওই ঘটনার তদন্তে সবদিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডুও বলেন, ‘‘হাসপাতালের ওই ঘটনার পরে যে পদক্ষেপ করার করা হচ্ছে।’’ হাসপাতালের কোন কর্মী, আয়া কিংবা রক্ষীর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া কী ‘মাতৃমা’ থেকে শিশুচুরি সম্ভব? হাসপাতালের এক আধিকারিকের জবাব, ‘‘হাসপাতালে যদি কোনও শিশু চুরি চক্র গজিয়ে ওঠে, তারও তদন্ত হবে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪৪৭, ৩৭৯, ৩৬৩, ৩৬৫ এই চারটি ধারায় মামলা রুজু করে শিশু চুরির ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছিল। চুরি যাওয়া শিশুটি সুলতানার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়ার পরে তাতে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪১১ ধারা যোগ করা হয়েছে। ধৃত সুলতানাকে সোমবার মেদিনীপুর আদালতে হাজির করিয়ে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত দোষ স্বীকার করেছে।
শিশু ও প্রসূতিদের ওয়ার্ডগুলির ভবন ‘মাতৃমা’র মূল ফটকে বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীরা থাকেন। একজন নয়, তিন- তিনজন। প্রবেশের নির্দিষ্ট কার্ড ছাড়া এখানে কেউ ঢুকতে পারেন না। কিন্তু গত রবিবার দুপুরে হাসপাতালে প্রবেশের পুরনো কার্ড দিয়েই ঢুকে পড়েছিল অভিযুক্ত সুলতানা। সেখানে মিনিট পাঁচেক থেকেই শিশু নিয়ে বেরিয়ে যায় ওই মহিলা। শিশুটিকে বিক্রি করার কোনও পরিকল্পনা ছিল কি না, তদন্তে সে সব দিকও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। চারতলার ওই ওয়ার্ডে যে এক শিশুপুত্র রয়েছে, সে খবরই বা অভিযুক্ত মহিলা পেল কি ভাবে, দেখা হচ্ছে সেটাও। এক তদন্তকারী জানান, অভিযুক্ত মহিলা আগে হাসপাতালে এসে শিশু চুরির চেষ্টা করেছিল কি না, করলে কি ভাবে করেছিল, সেই সবের খোঁজও চলছে। ঘটনার সঙ্গে পাচার চক্রের কোনও যোগ মেলেনি।
ধৃতের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে সুমিত্রার শাশুড়ি মাধবীদেবী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যে কষ্ট ভোগ করেছি, তা যেন আর কেউ না ভোগ করেন।’’