প্রতীকী ছবি
করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শিশুদের টিকাকরণ। এর ফলে ডায়েরিয়া, হাম-সহ অন্য রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। চিকিৎসকেরাও মেনেছিলেন, বেশ কিছু রোগ থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার একমাত্র উপায় টিকাকরণ। তাই সবদিক দেখে ফের টিকাকরণ চালুর নতুন নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য।
জেলা স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, সেই নির্দেশ জেলায় এসে পৌঁছেছে। তার পরে ব্লকগুলিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। আজ, সোমবার থেকেই টিকাকরণের কাজ শুরু হওয়ার কথা। রাজ্যের পাঠানো নির্দেশে জানানো হয়েছে, টিকাকরণে সামাজিক দূরত্ব বিধি মানতে হবে। ভিড় করা যাবে না। এক-এক সময়ে ৪- ৫ জনকে ডাকতে হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, ‘‘টিকাকরণ সংক্রান্ত রাজ্যের নির্দেশ পেয়েছি। টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই টিকাকরণ হবে।’’
জেলা স্বাস্থ্যভবনের এক আধিকারিক জানান, শিশুদের বিভিন্ন টিকা দেওয়া হয়। যেমন পোলিয়ো, হাম, টিটেনাস, জলবসন্ত প্রভৃতি। ভিটামিন- এ, হেপাটাইটিস-বি প্রভৃতি ডোজও দেওয়া হয়। শিশুর ৬ সপ্তাহ বা দেড় মাসে দেওয়া হয় পোলিয়ো এবং পেন্টা-১ ডোজ। ১০ সপ্তাহ বা আড়াই মাসে পোলিয়ো ইঞ্জেকশন (আইপিভি), পেন্টাব্যালেন্ট টিকা দেওয়া হয়। এ ভাবেই টিকাকরণ চলে। শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের প্রাথমিক ক্ষমতা গড়ে ওঠে টিকাকরণের মাধ্যমেই। সরকারি হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও অনেক চিকিৎসকও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও এই কাজ করেন। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুরে টিকাকরণের হার কমবেশি ৯৯ শতাংশ। ২০১৮-’১৯ সালে ৬৮,৮১৭ জন ও ২০১৭- ’১৮ সালে ৬৮,২৩৭ জন শিশুর টিকাকরণ হয়েছিল।’’
সমস্যার শুরু মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় তখন থেকেই শিশুদের সব টিকাকরণ বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ে থেকে লকডাউনও শুরু হয়। ওষুধের দোকানগুলিতেও ভ্যাকসিনের জোগানও কমতে থাকে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে সব চিকিৎসকেরা টিকাকরণ করাতেন, তাঁরাও এই কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন। উদ্বেগ দেখা দেয় শিশুর পরিবারের লোকেদের মধ্যে। জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী মানছেন, ‘‘শিশুদের টিকাকরণ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’’ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) মেদিনীপুর শাখার সম্পাদক কৃপাসিন্ধু গাঁতাইতের কথায়, ‘‘টিকাকরণই শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের প্রাথমিক ক্ষমতা গড়ে তোলে।’’ জেলার অন্য আরেক শিশু চিকিৎসকেরও মতে, নির্দিষ্ট সময়ে টিকাকরণ না হলে পোলিয়ো-সহ অনান্য সংক্রামক রোগ বেড়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। সেই কারণে টিকাকরণ চালু রাখাই যুক্তিপূর্ণ।
জেলার অন্য এক স্বাস্থ্য আধিকারিক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘টিকাকরণ দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা শিশুদের পক্ষে ভাল নয়। তাই রাজ্য নতুন নির্দেশ দিয়েছে। সেই মতো ফের জেলায় টিকাকরণ চালু হচ্ছে।’’ গর্ভবতীদের রুটিন পরীক্ষাও যথারীতি হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।