বাড়ি তৈরির কাজ থমকে শালবনিতে। —নিজস্ব চিত্র।
নতুন বছরেই নতুন বাড়ির গৃহপ্রবেশটা সেরে ফেলবেন বলে ঠিক করেছিলেন শালবনি ব্লকের বেলাশোল গ্রামের গোপাল মাহাতো। দ্রুত গতিতেই এগোচ্ছিল বাড়ি তৈরির কাজ। কিন্তু গত একমাস হল বাড়ি নির্মাণ থমকে গিয়েছে। গোপালবাবুর কথায়, “টাকা পাচ্ছি না তো! ব্যাঙ্কে গেলে ৩-৪ হাজার টাকার বেশি দিচ্ছে না। তা দিয়ে কি আর বাড়ি বানানো যায়।”
ছবিটা গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়েই। নোট বাতিলের ধাক্কায় জেলার নানা প্রান্তে বন্ধ রয়েছে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির কাজ। কবে বাড়ি নির্মাণ শেষ হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় উপভোক্তারা। সমস্যা মানছে প্রশাসনও। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সচিব প্রবীর ঘোষ বলেন, “আবাসন প্রকল্পে অর্থের সমস্যা নেই। তবে নোট সঙ্কটে বাড়ি নির্মাণের কাজ কিছুটা ধাক্কা খাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদেরও তো কিছু করার নেই।” প্রবীরবাবু আরও জানান, পাশ বই সংক্রান্ত সমস্যা, সময়ের মধ্যে খরচের হিসেব না দিতে পারার মতো কিছু কারণে কিছু উপভোক্তা টাকা পাননি। তবে বাকি ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। তবে হাতে নগদ না থাকায় তাতে লাভ হচ্ছে না।
ইন্দিরা আবাস যোজনার নাম বদলে এ বার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা করা হয়েছে। তবে ইন্দিরা আবাসে অনুমোদন পাওয়া প্রায় ২৭ হাজার বাড়ি নির্মাণের কাজ এখনও অসম্পূর্ণ জঙ্গলমহলের এই জেলায়। চলতি আর্থিক বছরেই সেই সব বাড়ির বেশিরভাগের নির্মাণকাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল প্রশাসন। কারণ, ইতিমধ্যেই ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাতেও ২০,৮৪৯টি নতুন বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন মিলেছে। আর্থিক বছর শেষ হতে এখনও প্রায় ৪ মাস বাকি। যেহেতু নতুন আর্থিক বছরে প্রকল্পের নামও পরিবর্তন হবে তাই আগের বাড়ি নির্মাণ দ্রুত সমাপ্ত করতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। কিন্তু নোট বাতিলের ধাক্কায় তখনই বিপত্তি দেখা দেয়।
নোট সঙ্কট কবে মিটবে, জানা নেই কারও। এমনিতেই গ্রামীণ এলাকার ব্যাঙ্কগুলিতে টাকা কম থাকে। ফলে, অনেক জায়গায় গ্রাহক সপ্তাহে ২৪ হাজার টাকাও পাচ্ছেন না। কবে যে গরিব মানুষগুলি সরকারি প্রকল্পে নতুন বাড়ি তৈরি করতে পারবেন, সেই প্রশ্নের জবাব আপাতত অজানাই।
ইন্দিরা আবাস যোজনা
সাল অর্ধসমাপ্ত বাড়ি সম্পূর্ণ বাড়ি
২০১৩-১৪ ৩,১৭৯ ১৩,৮২১
২০১৪-১৫ ৬,৪৯৫ ৩১,৫০৫
২০১৫-১৬ ১৭,৪২২ ২৩,৫৭৮