বেদখল জমিতে বেআইনি ব্যবসা

নিয়ম ভেঙেই চলছে ব্যবসা। শুধু চলছে বললে কম হবে, বেআইনি ব্যবসার আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে মেচেদা বাজারের কাছে উড়ালপুলের তলার জমি।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

মেচেদা  শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৭:৫৮
Share:

উড়ালপুলের নীচে গজিয়ে উঠেছে গ্যারাজ, টায়ারের দোকান। — নিজস্ব চিত্র।

নিয়ম ভেঙেই চলছে ব্যবসা। শুধু চলছে বললে কম হবে, বেআইনি ব্যবসার আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে মেচেদা বাজারের কাছে উড়ালপুলের তলার জমি।

Advertisement

অনুমতি নেওয়ার বালাই নেই। নিজের ইচ্ছেতেই ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ও হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের সংযোগস্থলে উড়ালপুলেরর নীচে রমরমিয়ে চলছে হরেক রকমের ব্যবসা।

কোথাও ডাঁই করে রাখা বালি, স্টোনচিপস্‌-এর মতো ইমারতি দ্রব্য। আবার কোথাও অবাধে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে চলছে গাড়ির যন্ত্রাংশ ঝালাইয়ের কাজ। এ ছাড়া ঠান্ডা পানীয়ের দোকান, সেলুন তো রয়েছেই।

Advertisement

কোলাঘাট থেকে মেচেদা বাজার হয়ে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলগামী প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার পণ্যবাহী লরি-ট্যাঙ্কার, যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করে। এ ছাড়াও কলকাতা থেকে দিঘাগামী গাড়িও এই পথ দিয়েই যায়। অন্যতম ব্যস্ত এই জাতীয় সড়কের মেচেদা বাজারের কাছে রয়েছে মেচেদা রেলস্টেশন ও কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড। মেচেদা বাজারের কাছে জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কের সংযোগস্থল ‘ফাইভ পয়েন্ট’ হিসেবে পরিচিত।

চলছে ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসাও।

যানবাহনের গতি বৃদ্ধির জন্য ওই এলাকায় বছর কয়েক আগে দু’টি উড়ালপুল নির্মাণ করেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকেই দু’টি ফ্লাইওভারের তলার ফাঁকা জায়গা দখল হতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফাঁকা জায়গায় প্রথমে বাঁশের কাঠামো ও ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে অস্থায়ী ভাবে দোকান ঘর তৈরি শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে স্থায়ী কাঠামো গড়ে ওঠে। দোকানের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে একশো পেরিয়ে গিয়েছে।

এখানেই রয়েছে একাধিক গ্যারাজ। সেখানে অক্সিজেন গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করে ঝালাইয়ের কাজ চলছে। বেশিরভাগ সময় ফ্লাইওভারের তলায় ছোট- বড় মিলিয়ে শতাধিক লরি দাঁড় করানো থাকে। শুধু ফাঁকা জায়গা নয়, জাতীয় সড়কের পাশে থাকা নিকাশি খালের একাংশও দখল হয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, ‘‘এখানে দোকান ঘর করার জন্য জায়গা পেতে টাকা দিতে হয়েছে। তবে জায়গার কোন নথিপত্র আমাদের কাছে নেই।’’

কারা নিয়েছে ওই টাকা? এ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ ওই দোকানদার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার কয়েকজন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে উড়ালপুলের তলার ফাঁকা জায়গা দোকানঘর তৈরির জন্য বিলি করেছে। উদাসীন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। হেলদোল নেই পুলিশ-প্রশাসনেরও। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘উড়ালপুল দিয়ে প্রতিনিয়ত গ্যাস, তেল ট্যাঙ্কার-সহ বিভিন্ন রাসায়ানিক পদার্থ বোঝাই ভারী যানবাহন চলাচল করে। আর ফ্লাইওভারের নিচে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে গাড়ি মেরামতি, ঝালাইয়ের কাজ চলছে। ফলে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।’’

অভিযোগ, উড়ালপুলের তলায় ট্রাফিক পয়েন্টে পুলিশ থাকে। যদিও উড়ালপুলের নীচে বিপজ্জনক ব্যবসা বন্ধ করার বিষয়ে প্রশাসন উদাসীন। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রশান্ত অধিকারী বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিস্তারিত ভাবে খোঁজ নেওয়া হবে। এ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

বাস্তবে উড়ালপুলের নীচের জমি কবে দখলমুক্ত হয়, সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement