বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে এসে জলে ডুবে মৃত্যু হল খড়্গপুর আইআইটি এক ছাত্রের। বৃহস্পতিবার ভোরে পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামে সুবর্ণরেখা নদীতে ঘটনাটি ঘটে। মৃতের নাম চন্দন সুমন্থ মুদিদানা (২৪)। তাঁর বাড়ি হায়দরাবাদে। তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাঁচ বছরের ডুয়েল ডিগ্রি কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, স্নান করার সময় কোনও ভাবে ডুবে গিয়েছেন ওই ছাত্র। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সূর্যের আলো ফোটার আগেই দু’টি গাড়িতে আইআইটির ১২ জন ছাত্র নয়াগ্রামে নদী তীরবর্তী ডাহি ঘাট এলাকায় পৌঁছন। নদীতে স্নান নামেন চন্দন ও তাঁর বন্ধুবান্ধবরা। স্নানের আনন্দে মশগুল বাকিরা অনেকক্ষণ খেয়ারলই করেননি চন্দন সেখানে নেই। এরপরই শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। ছাত্রদের অনুরোধে মাছ ধরতে যাওয়া স্থানীয় কয়েক জনও কিছুটা সাহায্য করেন। পরে নদীর জলে ভেসে ওঠে চন্দনের দেহ। সকাল সাতটা নাগাদ নয়াগ্রাম থানার পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। থানায় আসেন আইআইটির চিকিত্সক ও নিরাপত্তা অফিসার। চন্দনের সহপাঠী ও সঙ্গীদের জেরার পরে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ। তারপর ময়না তদন্তের জন্য দেহটি প্রথমে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে পাঠানো হয়। সেখান থেকে দেহটি পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে। তবে বিকেল হয়ে যাওয়ায় এ দিন আর ময়না তদন্ত হয়নি। আজ, শুক্রবার তা করা হবে।
আইআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পাঁচ বছরের ডুয়েল ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হন চন্দন। থাকতেন ‘মেঘনাদ সাহা হল’ নামের ছাত্রাবাসের ই-থ্রি ব্লকের ৩০৪ নম্বর ঘরে। হিসেব মতো এ বার তার ‘পাস আউট’ হওয়ার কথা। কিন্তু আশানুরূপ ফল না হওয়ায় এ বার তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল সেমেস্টার দিয়েছিলেন চন্দন। গত ২৮ এপ্রিল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তারপরই এ দিন চন্দন ও তাঁর সহপাঠীরা গাড়ি ভাড়া করে নয়াগ্রামে হুল্লোড় করতে আসেন। গাড়ির চালকেরা জানান, বুধবার রাত আটটা নাগাদ ১২ জন ছাত্র আইআইটি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে খড়্গপুরের চৌরঙ্গীর কাছে একটি হোটেলে খাওয়াদাওয়া করেন। তারপর রাত বারোটা নাগাদ তাঁরা নয়াগ্রাম রওনা দেন। কেশিয়াড়ি হয়ে ভসরাঘাটের ফেয়ার ওয়েদার সেতু পেরিয়ে তাঁরা নয়াগ্রামে পৌঁছন। স্থানীয়রা জানান, আইআইটি-র পড়ুয়ারা মাঝেমধ্যেই দলবেঁধে এলাকায় এসে এমন হইহুল্লোড় করে।
আইআইটি-র মতো একটি প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা এভাবে রাত বিরেতে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসে পড়ায় স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। এ দিন ‘মেঘনাদ সাহা হল’-এর সুপারভাইজার প্রদীপকুমার দুবে বলেন, “পরীক্ষার চাপ মুক্ত হওয়ার পরে বিনোদনের জন্য কিছু ছাত্র বুধবার রাতে বেরিয়েছিল। চৌরঙ্গীর একটি রেস্তোরায় খাওয়া দাওয়া সেরে একটি দল হস্টেলে ফিরে আসে। বাকি বারোজন সুবর্ণরেখার উদ্দেশ্যে গিয়েছিল। আমরা ভোরে দুর্ঘটনার খবরটা পাই।” আইআইটি-র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিভাগীয় প্রধান প্রশান্তকুমার দাস বলেন, “অন্ধ্রপ্রদেশে ওই ছাত্রের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে। পরিবারের লোকজন আসছেন।” আইআইটি-র ডিন (স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ারস্) মণীশ ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে এটি একটি দুর্ঘটনা। কেন ওই ছাত্ররা নয়াগ্রামে গিয়েছিল সেটা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
এ দিন চন্দনের মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েন তাঁর সহপাঠীরা। চন্দনের সহপাঠী শিবার কথায়, “আনন্দ করতে এসে কী হয়ে গেল।”