জমায়েত: জামবনি ব্লকের ধড়সা অঞ্চলের সভায় ছত্রধর। ফাইল চিত্র
জঙ্গলমহলে কি মাথা চাড়া দিচ্ছে জাতিসত্বার আন্দোলন! বিধানসভা ভোটের আগে আদিবাসী ও কুড়মি সংগঠনের কার্যকলাপ ঘিরে চিন্তায় শাসক-শিবির। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলে শাসকদলের রাজনীতির রাশ ছত্রধর মাহাতোর হাতে রাখার পক্ষে সওয়াল শুরু করেছেন তৃণমূলের একাংশ। ছত্রধরের সভায় করোনা আবহে ভাল জমায়েতও হচ্ছে। রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে ছত্রধর নিজের মতো করে সংগঠন সাজাতে প্রস্তাবও দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বকে। যদিও তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের একাংশ ছত্রধরকে নিয়ে অসন্তুষ্ট। আড়ালে তাঁরা বলছেন, ছত্রধরের অতীত-ইতিহাস নিয়ে বিরোধীরা যে ভাবে সরব, তাতে দলকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
আদিবাসী সাঁওতাল সমাজ এখন বিভাজিত। একাংশ তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন। বাকিরা নানা দাবিতে সরব হচ্ছেন। কুড়মিরাও আদিবাসী তালিকাভুক্তি, ভাষা ও ধর্মের স্বীকৃতি চেয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন। গত ৬ সেপ্টেম্বর সাংবিধানিক বঞ্চনার দিন হিসেবে ‘কালা দিবস’ পালন করেছে একাধিক কুড়মি সংগঠন। আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের আভ্যন্তরীণ বিরোধের সঙ্গেও জুড়েছে রাজনীতি। রবীন টুডুর তৃণমূল ঘনিষ্ঠতার বিরোধিতায় সরব হয়েছেন সংগঠনের একাংশ।
এই আবহেই আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলে সংগঠন ঢেলে সাজতে উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে কিছু রদবদলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্রের খবর, ছত্রধরও ঝাড়গ্রাম জেলায় সংগঠনকে ঢেলে সাজতে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। রাজ্য নেতৃত্বকে ছত্রধর জানিয়েছেন, জেলার চারটি বিধানসভা পুনর্দখলের স্বার্থে তাঁর প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখা হোক। যদিও সেই প্রস্তাব খোলসা করতে রাজি হননি তিনি।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে শক্তি বোঝাতেও মরিয়া ছত্রধর। তাঁর উপস্থিতিতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ভাল ভিড় হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব ভুলে গত কয়েকদিনে জামবনি, সাঁকরাইল, লালগড়, এমনকি পড়শি জেলা বাঁকুড়ার মঠগোদায় ছত্রধরের কর্মসূচিতে ঢল নামে। তার ছবি ও ভিডিয়ো দেখে তৃণমূলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও তা দেখে তৎপর হয়েছেন। কারণ, এলাকায় ফিরে শুরুতে রাজনীতির ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে ত্রাণ বিলির কয়েকটি কর্মসূচিতে ছত্রধর ছিলেন। কিন্তু সেখানে হাতে গোনা লোকজন ছিল। অথচ ছত্রধর রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে ছবিটা বদলেছে।
কিছুদিন আগে লালগড়ের সিজুয়া অঞ্চলের বনপুকুরিয়ায় পুরনো সঙ্গীদের নিয়েও অরাজনৈতিক সভা করেছেন ছত্রধর। সেখানেও প্রচুর লোক হয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, দশ বছর আগের পুরনো কায়দায় লোকজনকে ভয় দেখিয়ে ছত্রধরের সভায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছত্রধরকে দিয়ে ফের সন্ত্রাস করে তৃণমূল ক্ষমতা পুনর্দখলের চেষ্টা করছে বলে মত বিজেপি ও বামেদের।
ছত্রধরের অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘মানুষ আমাকে ভালবাসেন। তাই আমি তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সর্বস্তরের মানুষ দলীয় কর্মসূচিতে আসছেন।’’ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুব্রত সাহারও বক্তব্য, ‘‘ছত্রধর মাহাতোর সভায় লোকজন হচ্ছে। মানুষ তাঁকে চাইছেন।’’