মঙ্গলবার মেচেদা থেকে বুড়ারি অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নির্বাচনী র্যালি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
ভোটের আগে শেষবেলার প্রচারে এলেন। করলেন রোড শো। তাতে হল বিপুল জমায়েত। কিন্তু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় মঙ্গলবার কোনও বক্তৃতা করতে দেখা গেল না তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দলীয় নেতার দেখা মিললেও ভোটের আগে তাঁদের চাঙ্গা করতে তিনি কোনও বক্তৃতা না করায় কিছু হতাশ দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ।
মেচেদা থেকে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে বুড়াড়ি বাজার পর্যন্ত মঙ্গলবার অভিষেকের রোড-শো করার কর্মসূচি ছিল। পূর্ব নির্ধারিত সূচি মতো পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে জনসভা করে হেলিকপ্টারে এদিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ মেচেদায় পৌঁছন অভিষেক। ততক্ষণে তাঁর রোড-শোয়ে সামিল হতে মেচেদায় বিদ্যাসাগর মূর্তির পাদদেশের কাছে জমায়েত হন দলের কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক। রোড শোয়ের প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশেও অপেক্ষা করছিলেন দলের কর্মী-সমর্থক এবং এলাকাবাসী। বর্ণাঢ্য শোভযাত্রা সহকারে মেচেদা থেকে বিকাল ৩ টা ৫০ মিনিটে গাড়িতে চড়ে অভিষেক রোড-শো শুরু করেন। ওই গাড়িতে তাঁর সঙ্গেই ছিলেন রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী, তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র, নন্দকুমারের বিধায়ক সুকুমার দে ও মহিষাদলের বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী।
অভিষেকের গাড়ির সামনে ও পিছনে হাঁটছিলেন এ দিন কয়েক হাজার দলের স্থানীয় নেতা, কর্মী, সমর্থককে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। রোড-শো শান্তিপুর এবং রামচন্দ্রপুর বাজার হয়ে বিকেল ৩ টা ৩৫ মিনিট নাগাদ বুড়ারি বাজারে এসে পৌঁছায়। বুড়ারি বাজারেও অপেক্ষা করছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। তাঁদের অনেকেরই আশা ছিল, রোড-শো শেষে বক্তৃতা করবেন অভিষেক। কিন্তু এ দিন অভিষেক বক্তৃতা না করেই জেলা ছাড়েন। দলীয় সূত্রের খবর, এদিন মেচেদায় অভিষেকের কর্মসূচি শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই বার্তা আসে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভবনা রয়েছে। সে জন্য তিনি দ্রুত হেলিকপ্টারে হাওড়ার ডুমুরজলায় হেলিপ্যাডে ফিরে যান। সেখান থেকে গাড়িতে হুগলিতে দলের কর্মসূচিতে যান অভিষেক।
এ দিন পড়শি জেলার নারায়ণগড়ে জনসভা ছিল অভিষেকের। সেখানে নাম না করে শুভেন্দুকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ কটাক্ষ করতে তাঁকে শোনা গিয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলনেতার জেলায় কর্মসূচিতে পালনে অভিষেক চুপ থাকায় খানিকটা হতাশ দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। রোড-শোয়ে যোগ দেওয়া শান্তিপুর এলাকার তৃণমূল সমর্থক দীপঙ্কর মাইতি, বুড়ারির বাসিন্দা অনিমেষ জানাদের কথায়, ‘‘ভোট প্রচারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় ফের আসায় আমরা খুব উৎসাহিত। তবে আমরা আশা করেছিলাম রোড-শো শেষে তিনি দলের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন। উনি বক্তৃতা না করায় হতাশ হয়েছি।’’ শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হয়ে লড়াই করা এক তৃণমূল নেতাও বলছেন, ‘‘অভিষেক আমাদের জেলায় এসে কী বার্তা দেন, তা শোনার আশায় ছিলাম। কিন্তু উনি বক্তৃতা না করায় কিছুটা অবাক হয়েছি।’’ এ ব্যাপারে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস আসায় অভিষেক বক্তৃতা করতে পারেননি। তবে আমাদের কর্মসূচি সফল হয়েছে।’’
ঘটনাচক্রে এ দিনই তমলুক সাংগঠনিক জেলার সুতাহাটা এবং মহিষাদলে সভা ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। আজ, বুধবারও শুভেন্দুর জনসভার কর্মসূচি রয়েছে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কাঁকটিয়া বাজারের দুর্গামণ্ডপ মাঠে। এ দিন অভিষেকের কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘‘তৃণমূল যতই জনসংযোগ চালাক, আমজনতা ওদের দুর্নীতি ধরে ফেলেছে। ভোটে তার ফল সামনে আসবে।’’