হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মানুয়ারা বিবি। নিজস্ব চিত্র
কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে শো-কজ করা হল পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের এক নার্সকে। অভিযোগ, ওই নার্স এক মহিলার ইঞ্জেকশন চ্যানেলে নির্দিষ্ট ওষুধ দেওয়ার বদলে অন্য রোগীর শরীর থেকে বার করা অ্যাসিডিক ফ্লুইড ব্যবহৃত সিরিঞ্জ দিয়েই তাঁর চ্যানেলে দিয়ে দিয়েছেন। ঘটনায় ওই মহিলার পরিবার হাসপাতালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, পেট ব্যথার জন্য গত রবিবার পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল দাসপুরের বাসিন্দা বছর তিরিশের মানুয়ারা বিবিকে। মহিলা বিভাগের ২১৭ নম্বর শয্যায় তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। চিকিৎসকের নির্দেশ মতো মানুয়ারার বাঁ’হাতে ইঞ্জেকশন দেওয়ার চ্যানেল করেন কর্তব্যরত এক নার্স। মানুয়ারার পাশের ২১৬ নম্বর শয্যায় বুক জ্বালা এবং হাইপার অ্যাসিড সংক্রান্ত অসুবিধায় চিকিৎসাধীন ছিলেন অন্য এক মহিলা।
কর্তব্যরত চিকিৎসক ২১৬ নম্বর শয্যার মহিলার শরীর থেকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে অ্যাসিডিক ফ্লুইড বের করছিলেন। সেই তরল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার কথা ছিল। ঠিক ওই সময়ই মানুয়ারাকে ইঞ্জেকশন দিতে আসেন অভিযুক্ত নার্স। মনুয়ারার পরিবারে অভিযোগ, ওই নার্স ব্যবহার করা ইঞ্জেকশনটি দিয়েই অ্যাসিডিক ফ্লুইড মানুয়ারার ইঞ্জেকশন চ্যানেলে দিয়ে দেন।
মানুয়ারার পরিবারের দাবি, অ্যাসিডিক ফ্লুইড মানুয়ারার শরীরে যাওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বিষয়টি সামনে আসতেই রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। হাসপাতাল সুপার শচীন রজকের কাছেও ক্ষোভ উগরে দেন রোগীর আত্মীয়রা। অভিযুক্ত নার্সের শাস্তির দাবিতে করেন তাঁরা। হাসপাতাল সুপার বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিলে সেদিনকার মত ক্ষান্ত হয় বিক্ষোভ। বুধবার সকালে ওই বিষয়ে হাসপাতাল সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন মানুয়ারার পরিজন।
মানুয়ারার স্বামী শেখ আফরোজ বলেন, ‘‘স্ত্রীকে ভর্তি করানোর পরে আমি এবং আমার দুই আত্মীয় তখন স্ত্রীর শয্যার পাশেই ছিলাম। আমরা নার্সকে ইঞ্জেকশন দেওয়া নিয়ে সতর্ক করলেও উনি আমাদের কথায় কান দেননি।’’
হাসপাতাল সুপার শচীন রজক নার্সের গাফিলতির অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি সত্যি। ওই নার্স তাঁর ভুলের কথা আমার কাছে স্বীকার করেছেন। তাঁকে শো-কজ করা হয়েছে। উনি বৃহস্পতিবার শো-কজের জবাব দেবেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি আমি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককেও জানিয়েছি।’’ ঘটনায় অভিযুক্ত নার্সের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অ্যাসিডিক ফ্লুইডে মানুয়ারার শরীরের কি কোনও ক্ষতি হতে পারে? হাসপাতাল সুপারের জবাব, ‘‘এ ধরনের ঘটনায় রোগীর বড়সড় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শুধুমাত্র এলার্জি জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে মানুয়ারা বিবির ক্ষেত্রে এ ধরনের কিছুই ঘটেনি। আমরা ওঁর চিকিৎসার ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নিচ্ছি।’’ যদিও রোগীর পরিবারের অন্য দাবি। তাঁর এক আত্মীয় ফরিদুল খাঁ এর অভিযোগ, ‘‘ওই নোংরা জল দিয়ে ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর রোগীর পেট ব্যথা আরও বেড়ে গিয়েছে। অভিযুক্ত নার্সের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ করুক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’’