আরটিও অফিসে খোলা বিদ্যুতের মিটার বক্স।
বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরেও হুঁশ ফেরেনি। জেলার বিভিন্ন সরকারি অফিসে ইতিউতি বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে তার। কোথাও খোলা রয়েছে মিটার বক্স। হাত লাগলেই বিপদ। বেশিরভাগ জায়গাতেই নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। অভিযোগ, যন্ত্র থাকলেও মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। আগুন লাগলে দমকলের জন্য ‘অসহায়’ অপেক্ষা ছাড়া করার কিছুই নেই। খড়্গপুরেও পুরসভা থেকে মহকুমাশাসকের কার্যালয়, আগুন লাগলে মোকাবিলার উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই বেশিরভাগ জায়গাতেই।
জেলার সরকারি অফিসেও আগুনের স্মৃতি নেই, তা নয়। জেলাশাসকের অফিস চত্বর, ট্রেজারি, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের অফিসে আগেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর দিন কয়েক শোরগোলও পড়েছিল। অভিযোগ, ফের সকলে চুপ। কাজ হয়নি কিছুই।
সরকারি অফিসে একটু ঘুরলেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ‘হাঁড়ির হাল’ চোখে পড়বে। প্রথমেই ধরা যাক, মেদিনীপুর শহরে কালেক্টরেটের কথা। এখানে জেলাশাসক, তিনজন অতিরিক্ত জেলাশাসক ছাড়াও একাধিক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের দফতর রয়েছে। রয়েছে পঞ্চায়েত দফতর, জমি অধিগ্রহণ দফতর, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরও। এমন গুরুত্বপূর্ণ অফিসের বারান্দায় বিপজ্জনক ভাবে বিদ্যুতের তার ঝুলছে। আগে দফতরের দু’একটি ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছিল। এখন প্রায় প্রতিটি আধিকারিকের ঘরে রয়েছে বাতানুকূল যন্ত্র। এ ছাড়াও কম্পিউটার, প্রজেক্টর দিয়ে ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’-এর ব্যবস্থা তো রয়েইছে। অভিযোগ, বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু ‘ওয়্যারিং’ সেই মান্ধাতার আমলের। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
খড়্গপুর পুরসভা ভবনও ‘জতুগৃহ’। দোতলা পুর ভবনে পুরপ্রধানের ঘরের বাইরেই রয়েছে একমাত্র অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। পুরভবনের একমাত্র এই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রেও জমেছে ঝুল। আগুন লাগলে সেটি কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে, জানেন না অনেকেই। ভবনের চারিদিকে ছড়িয়ে দাহ্য পদার্থ।
খড়্গপুর পুরভবনে একমাত্র পুরপ্রধানের ঘরের পাশেই লাগানো রয়েছে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র।
এক কর্মীর কথায়, “বহু বছর ধরে এ ভাবেই এখানে এই যন্ত্রটি ঝুলছে। আগুন লাগলে ভাবব, কী ভাবে এটা কাজে লাগাতে হয়। তবে সেই সময় এটা আদৌ কোনও কাজে দেবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।” এ বিষয়ে পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “অফিসের কাছেই দমকলের দফতর রয়েছে। তবে মুর্শিদাবাদের ঘটনার পরে আমরাও সতর্ক হয়েছি। অফিসের ভিতরে থাকা দাহ্য বস্তু সরানোর চেষ্টা করব।”
অবস্থা কমবেশি একই খড়্গপুরের মহকুমাশাসকের কার্যালয়েও। সদ্য নির্মিত এই ভবনের কোথাও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নজরে পড়ল না। সমস্যার কথা স্বীকারও করে নিলেন মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক আশিস মহাপাত্র। তিনি বলেন, “এত বড় অফিসে নিশ্চয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। আগুন লাগলে শুধু নথি নয়, জীবনহানিও হতে পারে।” এ বিষয়ে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “এটা ঠিক আমাদের ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। তবে আমার অফিস ঘরে একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। প্রতিটি দফতরে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।”
জেলা প্রশাসনের দাবি, অগ্নিনির্বাপণের জন্য এ বার পদক্ষেপ করা হচ্ছে। গত সোমবার প্রশাসনিক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “প্রতিটি জায়গাতেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার কথা বলেছি। যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা বিদ্যুতের তার, পুরনো ‘ওয়্যারিং’ পরিবর্তন করা হবে। সমস্ত অফিসও পরিষ্কার রাখতে বলা হয়েছে।”
খোলা মিটার বক্স থেকে বিপদের আশঙ্কা খড়্গপুর পুরসভা ভবনে।(ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল ও রামপ্রসাদ সাউ)
প্রশাসন সূত্রে খবর, কোন অফিসে কী কী যন্ত্র বিদ্যুতে চলে, এ বার তার হিসেব করা হবে। তা জানানো হবে বিদ্যুৎ দফতরকেও। সেই অনুযায়ী বিদ্যুৎ দফতর সংশ্লিষ্ট অফিসে কাজ করবে। ঝুঁকি এড়াতে জেলার প্রতিটি সরকারি অফিস, হাসপাতালকে এই নির্দেশ মেনে চলতে হবে। সর্বত্র অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিয়মিত তা বদলও করতে হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক সুশান্তবাবুর কথায়, “বহরমপুরের ঘটনার পর আমরা আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছি না। তাই সব ধরনের পদক্ষেপ করা হবে।”