ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রামে মাটির নীচে এ ভাবেই পুঁতে রাখা হয়েছিল চোলাই ভর্তি ড্রাম। নিজস্ব চিত্র
মাটি খুঁড়ে একের পর এক বসানো হচ্ছে চোলাইয়ের ড্রাম। তার উপর দেওয়া হচ্ছে মাটি। সন্দেহ এড়াতে কেউ কেউ আবার পুঁতে দিচ্ছেন ফুল গাছও!
এতে লাভ? একদিকে যেমন মাটির তলায় তাড়াতাড়ি গেঁজে গিয়ে মদ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আবার সহজে কেউ সন্দেহও করতে পারবে না। তবে সেই চোলাইয়ের হদিস পেতে কালঘাম ছুটছে আবগারি কর্মীদের।
শুধু চোলাই ঠেকে হানা নয়, গাঁইতি-কোদাল নিয়ে ‘গুপ্তধনের’ সন্ধানে চলেছেন আবগারি কর্মীরা। নয়াগ্রাম ব্লকের কোনও গ্রামে সন্দেজনক আলগা মাটি দেখলেই কোদাল-গাঁইতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন তাঁরা। পাওয়া গেলেই ‘হুররে’। না মিললে ফের আলগা মাটির খোঁজে পথচলা এ গ্রাম থেকে সে গ্রামের পথে। ঝাড়গ্রাম জেলা আবগারি কর্মীদের এটাই এখন রোজনামচা।
জেলা আবগারি দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই মদ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছ’শো জন মূলস্রোতে ফিরে বিকল্প পেশা নির্বাচন করতে সম্মত হয়েছেন। তাঁদের সহজ কিস্তিতে ঋণ ও স্বনিযুক্তি প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। ২২টি সচেতনতা শিবির করে ওই ছ’শো জনের সম্মতি পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও একাংশ মদ কারবারিদের বাগে আনা যাচ্ছে না। তাঁরা লুকিয়ে চুরিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে মদ বানাচ্ছেন। যার পুরোটাই হচ্ছে মাটির তলায়!
জেলা আবগারি দফতরের এক কর্মী বলেন, ‘‘প্রতিদিন অভিযানের ফলে চোলাই কারবারিরা দিশাহারা হয়ে পড়ছে। তাই তারা এখন মাটি খুঁড়ে পর পর ড্রাম বসিয়ে মদ তৈরি করছে। তারপর ড্রামগুলির উপর ঢাকনা দিয়ে খড় চাপা দেওয়া হচ্ছে। তার উপর দেওয়া হচ্ছে মাটি। এতে তাড়াতাড়ি গেঁজে গিয়ে মদ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। সন্দেহ এড়াতে কেউ পুঁতে দিচ্ছেন ফুল গাছ।” শুধু কী তাই কেউ খড়ের গাদার ভিতরে কিংবা ঘন আখ খেতের ভিতরে মদের ড্রাম লুকিয়ে রাখছেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। আবগারি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আগে অভিযান চালাতে স্থানীয় সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো। এখন আমাদের জনা চল্লিশ কর্মীর সঙ্গে প্রচুর পুলিশ থাকছে। অভিযান চালাতে সমস্যা হচ্ছে না।”
ঝাড়গ্রাম জেলা আবগারি সুপার মিলন বিশ্বাস বলেন, “প্রতিদিন অভিযানের ফলে চোলাই কারবারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মাটির তলায়, খড়ের গাদায়, আখের খেতে মদের ড্রাম লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। মাটির তলায় পোঁতা থাকা মদ খোঁজার জন্য আবগারি কর্মীরাও কোদাল-গাইতি নিয়ে অভিযানে যাচ্ছেন।”
মূলত, নয়াগ্রাম ব্লকের মলম, নিমাইনগর, নরসিংহপুর, যাদবপুর, কলমাপুকুরিয়া গ্রামের চোলাই কারবারিরা মাটির তলায় কিংবা আখ খেতের ভিতরে মদ লুকিয়ে রাখছেন। গত এক মাসে প্রায় চার হাজার লিটার চোলাই মদ বাজেয়াপ্ত করেছে আবগারি দফতর। ৭৩ হাজার লিটার মদ তৈরির তরল উপকরণ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বেআইনি মদ কারবারের অভিযোগে ৭৪টি মামলা রুজু করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ জনকে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি বলছেন, “বেআইনি মদ কারবারিদের কোনও ভাবে রেয়াত করা হবে না। সেই সঙ্গে কেউ মদ ব্যবসা থেকে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে এসে স্বনিযুক্তি প্রকল্পের সুযোগ নিতে চাইলে তাঁর পাশে দাঁড়াবে প্রশাসন।”