মাওবাদী ভীতিতে দাঁড়ি পড়েছে। আর তার জেরে ঝাড়গ্রাম এখন পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। কিন্তু চাহিদা মতো হোম স্টে-র বন্দোবস্ত না হওয়ায় বহু পর্যটকই ক্ষুণ্ণ।
শীতের মরসুমে দলে দলে পর্যটক ঝাড়গ্রামে বেড়াতে আসছেন। জঙ্গল-পাহাড় ঘেরা প্রকৃতির মাঝে গ্রামীণ পরিবেশে থাকার জন্য হোম স্টে-র খোঁজ করছেন অনেকেই। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি কোনও ধরনের হোম স্টে-ই চালু হয়নি এই জেলায়। অথচ প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরে দার্জিলিঙের আদলে জঙ্গলমহলেও হোম-ট্যুরিজম গড়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বছর পাঁচেক আগে বেলপাহাড়ির কয়েকটি এলাকায় গ্রামবাসীর বাড়িতে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রাথমিক কথাবার্তাও চালিয়েছিল বন দফতর। দার্জিলিং এবং পড়শি রাজ্য সিকিমে যে ভাবে হোম-ট্যুরিজম শিল্প সেখানকার মানুষজনকে বিকল্প আয়ের পথ দেখিয়েছে, সেই ধাঁচে জঙ্গলমহলেও হোম-ট্যুরিজম চালুতে ২০১২ সাল নাগাদ প্রাথমিক সমীক্ষা করেছিল বন দফতর। কিন্তু পাঁচ বছরেও হোম স্টে চালু হয়নি।
এক সময় পর্যটকেরা বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর বন বাংলোয় গিয়ে থাকতেন। স্থানীয় আদিবাসীরা গাইডের কাজ করে, দেশি মুরগি, খেতের আনাজ, বাবুই দড়ির তৈরি কুটিরশিল্প সামগ্রী পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে বাড়তি কিছু রোজগারও করতেন। কিন্তু ২০০৪ সালের ৪ ডিসেম্বর মাওবাদীদের মাইন বিস্ফোরণে এই বন বাংলো ধূলিসাৎ হয়ে যায়। তারপর থেকে গোটা ঝাড়গ্রামে জঙ্গল-পাহাড়ের প্রকৃতি ও গ্রামীণ পরিবেশের খুব কাছাকাছি থাকার ব্যবস্থা কার্যত আর নেই।
প্রশাসনের একাংশ মানছেন, বেলপাহাড়ির গাডরাসিনি, লালজল, খাঁদারানি, বালিচুয়ার মতো পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা গ্রামগুলিতে হোম স্টে লাভজনক হবে। বছর পাঁচেক আগে সে কাজে অনেকটা এগিয়েও পরে পিছিয়ে যায় বন দফতর। কাঁকড়াঝোরের পরেশ মুণ্ডা, আমলাশোলের লক্ষ্মীকান্ত মুণ্ডারা জানালেন, হোম-ট্যুরিজম চালুর জন্য কাঁকড়াঝোর গ্রামে ৬টি বাড়ি চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেখানে পরিকাঠামো গড়ার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ জানালেন, হোম স্টে নিয়ে আপাতত বন দফতরের কোনও পরিকল্পনা নেই। যদিও ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুনের আশ্বাস, “হোম স্টে চালুর ব্যাপারে পর্যটন দফতরের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পদক্ষেপ করা হবে।”