সংস্কারের পরে রাজ স্কুলের লাল ভবন। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল মহিষাদলের রাজ হাইস্কুলের ঐতিহ্যবাহী ‘লাল বিল্ডিং’। অবশেষে সংস্কারের পরে আগামী কাল, শনিবার সেই ভবনের নুতন করে উদ্বোধন হবে। সেই কাজে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
জেলা ইতিহাসে মহিষাদল জুড়ে রয়েছে আবেগ। মহিষাদলের রাজা লছমন প্রসাদ গর্গ (১৮৪১- ১৮৭৮) একটি অবৈতনিক উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেন ছিলেন। সেই বিদ্যালয়ের নাম পরবর্তীকালে মহিষাদল রাজ হাইস্কুল নামে খ্যাত হয়। ১৯৪০ সালে এই স্কুলে হীরক জয়ন্তী উদযাপিত হয়। রাজপ্রাসাদের আদলে স্কুলের ‘লাল বাড়ি’টি তৈরি হয়েছিল। ৭২০০ বর্গ ফুট এবং ৩০ ফুট উচ্চ দোতলা এই ভবনে অফিস ও শ্রেণি কক্ষ নিয়ে ১১টি ঘর ছিল। বিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। এখানে এক সময় শিক্ষকতা করেছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক জলধর সেন। রহস্য উপন্যাস লেখক দীনেন্দ্রকুমার রায় এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনা করেছেন বিখ্যাত হিন্দি কবি নীরালা। জাতীয় সরকারের সর্বাধিনায়ক সতীশচন্দ্র সামন্তও এই লাল বাড়িতে পড়াশোনা করতেন।
স্কুলের এমনই একটি ঐতিহাসিক ভবন দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। স্থানীয়েরা বারবার দাবি করছিলেন, এই লালবাড়ি সংস্কার করা হোক। সেই দাবি মেনে মাস আটেক আগে তৈরি হয় মহিষাদল রাজস্কুল বিল্ডিং সংস্কার কমিটি। সংস্কারে সাহায্য করতে বহু প্রাক্তনীও এগিয়ে আসেন। বর্তমানে সংস্কার প্রায় শেষ। শনিবার রয়েছে ভবনের উদ্বোধন। আপাতত লাল ভবন চত্বরে বসছে সতীশচন্দ্র সামন্ত, কবি নীরালার মূর্তি। স্থানীয় শিল্পী পবিত্র পাল তৈরি করেছেন ফাইবারের ওই দু’টি মূর্তি। ভবনের দেওয়ালে বসবে মনিষীদেরও ছবি, ফ্রেস্কো। আপাত ভবনে রয়েছে দুটি প্রশস্ত হলঘর। একটি হল ঘরে প্রাক্তনীদের স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার হয়েছে। অন্য হলঘরকে ব্যবহার করা হবে লাইব্রেরি হিসেবে। সেখানেও থাকবে অতীত ঐতিহ্যের নান নিদর্শন।
স্থানীয় বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্কুলের এই বিল্ডিংটি ঘিরে স্থানীয় মানুষের আবেগ রয়েছে। তাই সংস্কার করা হয়। মূল কাঠামোটি অক্ষত রেখে সংস্কার হয়েছে। ভবন সংলগ্ন একটি ঘাটও মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে সংস্কার করা হয়েছে।’’ তিলক জানান, তাঁর বিধায়ক কোটার দু’দফায় ২২ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে সংস্কার কাজে। লাল বিল্ডিং সংলগ্ন এলাকায় বয়স্কদের জন্য একটি উদ্যানও তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।