সম্প্রীতি নগরে দুর্গা পুজোর প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।
এখানে চণ্ডীপাঠ আর মসজিদের আজান— মিলেমিশে একাকার।
এই গ্রামে একই মাঠে মসজিদ আর দুর্গা মন্দিরের সহাবস্থান দীর্ঘ আট দশক ধরে দুর্গাপুজোয় সম্প্রীতির নিদর্শন হয়ে রয়েছে রামনগর-১ ব্লকের ঠিকরা গ্রাম।
পূর্ব মেদিনীপুরের এই গ্রামের কথা জেনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দিঘা এসে ঘুরে গিয়েছিলেন সেখানে। এলাকার নাম দিয়েছিলেন 'সম্প্রীতি নগর'। এই বছর ৮০ বছরে পা রাখছে সেই গ্রামের পুজো।মেতে উঠেছেন হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। এখানে পৃথক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যে ওই গ্রামের উন্নয়নের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে পর্যটন দফতর। দু’টি পুকুরঘাট, মায়ের ভোগ রান্নার ঘর, শৌচাগার, অতিথিদের থাকার বন্দোবস্ত সব গড়ে উঠেছে।
পুজোর আয়োজনে গ্রামের হিন্দু-মুসলমান দিন-রাত এক করে ফেলেছেন। পুজোর কাজে সরাসরি যুক্ত না হলেও পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য হাতিম সাহা, হেদাৎ সাহার মতো অনেকেই। তাঁরা এখন ঠিকরা, কাবরা, হিরাপুর, বাগমারির মতো গ্রামগুলিতে ঘুরে চাঁদা তুলছেন।হাতিম বলেন, ‘‘আমাদের মহরম এবং ঈদে এলাকার হিন্দুরা অংশ নেন। আমরাও দুর্গাপুজোয় কমিটির সদস্য হই।’’ পুজো উদ্যোক্তাদের অন্যতম সত্যরঞ্জন দত্ত বলেন, ‘‘আমরা মহরমে লাঠি খেলি। ওঁরাও দুর্গা পুজো কমিটির সদস্য হিসেবে আমাদের উৎসাহ জোগান।’’
নবনির্মিত মন্দিরের গা ঘেঁষেই রয়েছে মসজিদ। সেখানে প্রতিদিন ৫ বার আজান হয়। ৫ বার নমাজ পড়েন মুসলিমরা। মন্দিরেও চলে সকাল-সন্ধ্যা চণ্ডীপাঠ। ৮০ বছর আগে জাগরণ সঙ্ঘ প্রথম বার পুজো শুরু করে। তারও ২৫ বছর আগে তৈরি হয়েছিল মসজিদ। যে মাঠে মহরম এবং ঈদ পালিত হয় সেখানেই দুর্গাপুজো উপলক্ষে পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। পুজোর মূল উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক সুধাংশু শেখর দে-র কথায়, ‘‘সম্প্রীতির এমন চিত্র সারা বাংলায় যাতে বজায় থাকে তার জন্য আমরা 'বিভেদ নয় ঐক্য চাই' থিম সামনে রেখে পুজো করছি।"