ভাড়ার অপেক্ষায় দিঘার রাস্তায় দাঁড়িয়ে টোটো। নিজস্ব চিত্র।
করোনা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই স্বাভাবিক। শিথিল হয়েছে করোনা বিধি। আর তারই সুযোগে গরমের ছুটিতে পর্যটরদের ভিড় উপচে পড়ছে সৈকত শহর দিঘায়। সপ্তাহ জুড়ে পর্যটকদের ভিড় তো রয়েছেই, শনি-রবিবার সেই ভিড় চেহারা নেয় লোকারণ্যর। আর পর্যটক-লক্ষ্মীর চাপে থার্মোমিটারের পারদের মতো ওঠা-নামা করছে রাস্তার টোটো এবং অটোর ভাড়াও।
সাম্প্রতিক কালে টোটো ভাড়া নিয়ে বচসার জেরে বড়সড়ো সংঘর্ষের ঘটনার সাক্ষী থেকেছে সৈকত শহর। ২০১৯ সালে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগে পর্যটকদের সঙ্গে মারামারি হয়েছিল টোটো চালকদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে একাধিক থানা থেকে বিরাট পুলিশ বাহিনীকে ঘটনাস্থলে যেতে হয়। কিন্তু তারপরেও ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা—কোথাও টোটো ও অটোর নির্দিষ্ট ভাড়া প্রশাসনিকভাবে উল্লেখ করা থাকে না। যার পরিণাম সুযোগ বুঝে দিঘায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যেতে পর্যটকদের পকেট কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ। গত শনিবার সপরিবার দিঘা বেড়াতে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা অনুপম বিশ্বাস। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘার অমরাবতী পার্ক বেড়াতে গিয়েছিলাম। দেড় কিলোমিটারের কম দূরত্ব যেতে পাঁচ জনের কাছ থেকে টোটোয় আড়াইশো টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে।’’ শুধু অনুপম নন, সপ্তাহ শেষে পর্যটকদের অতিরিক্ত ভিড়ের সুযোগে উদয়পুর, দিঘা মোহনা ঘুরতে যেতে টোটো, অটোর বিরুদ্ধে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ অনেক পর্যটক।
ওল্ড দিঘায় সৈকতাবাসে ঢোকার মুখে মেন রাস্তায় কিছু টোটো দাঁড়িয়ে থাকে। তবে নেহরু মার্কেটের সামনে টোটো নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড রয়েছে। উল্টোদিকে হোটেল মালিক সংগঠনের যে অফিস ঘর রয়েছে তার পাশে সৈকত সরণিতে দাঁড়িয়ে থাকে প্রচুর অটো। এমনিতেই ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘার অমরাবতী পার্ক পর্যন্ত টোটোয় মাথাপিছু ভাড়া ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর অটোয় ১৫ টাকা। তবে নিউ দিঘায় ঢেউ সাগর কিংবা উদয়পুর পর্যন্ত পর্যটকদের কাছে টোটো এবং অটোচালকেরা দ্বিগুণ ভাড়া নেন বলে অভিযোগ। ওল্ড দিঘার এক টোটোচালক বলেন, ‘‘এক শ্রেণির টোটো চালক পর্যটকদের কাছ থেকে ইচ্ছে করেই বেশি ভাড়া নেয়। তবে এই নিয়ে বলার কেউ নেই। ফলে এমন ব্যবস্থাই চলছে।’’
ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা পর্যন্ত এক হাজারের বেশি টোটো এবং অটো চলে। দিঘা রেলস্টেশন এবং উদয়পুরে টোটো এবং অটো পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড রয়েছে। কিন্তু কোথাও কোন রুটে কত টাকা ভাড়া তার কোনও তালিকা কোনও স্ট্যান্ডেই চোখে পড়ে না। এ ব্যাপারে রামনগর-১ এর বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, ‘‘অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তবে কোন রুটে কত ভাড়া, সেই তালিকা সকলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতি স্ট্যান্ডে ঝোলানোর বিষয়ে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা করব।’’
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘পর্যটনের সুবিধার্থে প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভাড়া থাকা উচিত। স্থানীয় প্রশাসন আলোচনার ভিত্তিতে যদি ভাড়ার তালিকা নির্দিষ্ট করে দেয় তবে তাকে আমরা স্বাগত জানাব।’’ (শেষ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।