ফসল কাটার মরসুমে মেঠো এলাকায় হাতির দল আসে ফি বছরই। ফাইল চিত্র।
পুজো মিটতে না মিটতেই মেদিনীপুর সদর ব্লকে হাজির হাতির দল। দলে অন্তত ৫০টি হাতি রয়েছে। সঙ্গে একাধিক শাবকও রয়েছে।
একাদশীর রাতে দলটি লালগড় থেকে মেদিনীপুর সদর ব্লকে চলে এসেছে। বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মেদিনীপুরের এক বনকর্তা মানছেন, ‘‘হাতির বড় দলটি এখন সদর ব্লকে রয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এতগুলি হাতি একসঙ্গে এই এলাকায় আসেনি। তাই তাড়াতে খানিক সমস্যা হচ্ছে। তবে হুলা পার্টি ধীরে ধীরে দলটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করছে।’’
বন দফতরের এক সূত্রে খবর, বুধবার পর্যন্ত হাতির বড় দলটি লালগড়ে ছিল। ওই সূত্র জানাচ্ছে, বুধবার লালগড় রেঞ্জের আজনাশুলিতে ছিল ৩০- ৩৫টি হাতি। চাঁদড়া রেঞ্জের আমঝর্নায় ২টি, গাড়রায় ১৪- ১৬টি, পিঁড়াকাটা রেঞ্জের জয়নারায়ণপুরে ২টি, ভাদুতলা রেঞ্জের খাসজঙ্গলে একটি, নয়াবসত রেঞ্জের উখলায় একটি হাতি ছিল। একাদশীর রাতে ছবিটা বদলে যায়। ওই সূত্র জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার লালগড় রেঞ্জের পডিহায় ছিল ২-৩টি হাতি, চাঁদড়া রেঞ্জের দলকাঠি ২টি, শুকনাখালি ৩টি, আমঝর্নায় ৫০-৫১টি, পিড়াকাটা রেঞ্জের জয়নারায়ণপুরে দু’টি, নয়াবসত রেঞ্জের উখলায় একটি হাতি ছিল।
ফসল কাটার মরসুমে মেঠো এলাকায় হাতির দল আসে ফি বছরই। একসঙ্গে এত হাতি চলে আসায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। কারণ ধান ও অনান্য আনাজ এখনও মাঠেই রয়েছে। এ বার কাটা শুরু হবে। হাতির হানায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছেও। হাতির দল মেদিনীপুর সদর ব্লকে চলে আসায় উদ্বিগ্ন বন দফতরের একাংশও আধিকারিকও। স্থানীয় সূত্রে খবর, দিনভর চেষ্টা করেও হাতির দলটিকে জঙ্গলে ফেরত পাঠানো যায়নি। নাজেহাল হয়েছেন বনকর্মীরা। সদরের বাসিন্দা অরূপ নন্দী মানছেন, ‘‘জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে এলে ফসলের খেতও তছনছ করতে পারে হাতির দল। গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।’’ তবে তিনি বলেন, ‘‘বনকর্মীরা হাতিগুলিকে এক জায়গায় থাকতে দিচ্ছেন না। তাড়ানোর চেষ্টা করছেন।’’
বন দফতর হুলা পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছে। এরমধ্যেই কেউ কেউ আবার হাতিকে বিরক্ত করছে। এ দিন দুপুরে এক শাবককে বিরক্ত করা হয়েছে। মেদিনীপুরের এক বনকর্তা বলেন, ‘‘গ্রামের কয়েকজন এক শাবককে বিরক্ত করেছেন বলে শুনেছি। আমরা লক্ষ রাখছি যাতে অতি উৎসাহী কেউ হাতিকে বিরক্ত না করেন। বিরক্ত করলে হাতির দল গ্রামে ঢুকে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করতে পারে। এটা সকলকে বুঝতে হবে। বনকর্মীরা সাবধানে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছেন।’’ হাতির ভয়ে সন্ধ্যার পরে অনেকে ঘর থেকে বেরোচ্ছেন না। এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘হাতির বিশাল দলটি খেয়ে নষ্ট করলে আমাদের বিপদের শেষ থাকবে না। চিন্তায় রয়েছি।’’