ঘরের উপরে ভেঙে পড়েছে ট্রান্সফর্মার (বাঁদিকে)। হাসপাতালে আহত (ডানদিকে)। নিজস্ব চিত্র।
বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি ও কয়েক সেকেন্ডের ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল ঘরবাড়ি। ঝড়ের দাপটে ঘরের উপর ভেঙে পড়ল আস্ত গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি। উড়ে গিয়েছে তিনতলা হাইস্কুলের ছাউনি। ঘূর্ণিঝড়ে গুরুতর জখম সাতজন ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে। খবর পেয়ে রাতেই এলাকায় দৌড়ে যান পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক-সহ পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকেরা। দুর্গতের জন্য প্রাথমিক ভাবে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মতোই শনিবার বিকেলে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি শুরু হয়। ঘণ্টাখানেক পরেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। এগরা-২ ব্লকে পাহাড়পুর বাজার ও পাহাড়পুর জ্ঞানেন্দ্র ঝাড়েশ্বর হাইস্কুল রয়েছে। পাহাড়পুর খালের উল্টোদিকে পটাশপুর-২ ব্লকের উত্তরচৌমুক ও বামুনবাড় সহ একাধিক গ্রাম রয়েছে। শনিবার পাহাড়পুরে বাজারে হাট বসেছিল। সেই সঙ্গে হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে সন্ধ্যায় প্রসাদ বিতরণের অনুষ্ঠান চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ হঠাৎ সোঁ সোঁ শব্দে এলাকায় ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয়। ঝড়ের দাপটে একাধিক দোকান ও ঘরের উপর আস্ত গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে অনেক বাসিন্দা ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিতে হাইস্কুলে ছোটেন। সেই সময় হাইস্কুলের তিনতলার ঘরের অ্যাসবেস্টসের ছাউনি উড়ে এসে নীচে পড়ায় বেশ কয়েকজন গুরুতর জখম হন। ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়ায় একটি পরিবারের কয়েকজন আহত হয়েছেন।
পটাশপুরে উত্তরচৌমুক ও বামুনবাড়ে ঝড়ের তাণ্ডবে একাধিক কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি দোকানের ছাউনি উড়ে যায়। একটি দোকানের ইটের দেওয়াল ভেঙে একজন গুরুতর জখম হন। প্রায় কুড়ি সেকেন্ড ধরে ঝড়ের তাণ্ডব চলে পটাশপুর ও এগরার সীমানায় উত্তরচৌমুক ও পাহাড়পুরে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় শনিবার রাত থেকে প্রায় কুড়ি ঘণ্টা এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। বেসরকারি মতে প্রায় তিরিশটি দোকান ও বসতবাড়ি এবং একটি হাইস্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হেক্টর পাকা ধানের খেত। ঝড়ের পরেই স্থানীয়রা আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে এগরা সুপার স্পেসালিটি হাসপাতালে আহত ছয়জন চিকিৎসাধীন। রাতে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছন বিধায়ক উত্তম বারিক। বিডিও এবং পুলিশির উপস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রাণের ত্রিপল ও চাল ডাল বিতরণ করা হয়। প্রশাসনিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন বিধায়ক। সরকারি মতে দুটি থানা এলাকা মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা দশের অধিক বলে জানানো হয়েছে।
পাহাড়পুরে এক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শঙ্কর বায়েন বলেন, ‘‘ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাগ প্রচণ্ড জোরে শব্দে বাতাস বইতে শুরু করে। গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে হুড়মুড়িয়ে ঘরবাড়ি উপরে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে মানুষজন হাইস্কুলের দিকে দৌড়ে যায়। স্কুলের ছাউনি উড়ে এসে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। ঝড়ে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আহতদের এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’’
বিধায়ক উত্তম বারিক বলেন, ‘‘শনিবার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রশাসনিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সহযোগিতা করা হবে।’’ এগরার মহকুমা শাসক সম্রাট মণ্ডল বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত দশটির বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এলাকায় ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলিকে প্রশাসনিক ভাবে সহযোগিতা করা হবে।’’