পরিদর্শন: ঘাটালে স্বাস্থ্য সচিব। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালে রোগী এলেই ‘রেফার’ করে দায় সারে জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল। এমন অভিযোগ হামেশাই ওঠে।
এ বার ‘রেফার’ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিবের ভর্ৎসনার মুখে পড়লেন পশ্চিম মেদিনীপুরের স্বাস্থ্যকর্তারা। জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করেন, কখনও কখনও বাধ্য হয়েই রেফার করতে হয়। প্রধান সচিব অবশ্য তাতে তেমন আমল দেননি। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, এত রেফার করা যাবে না। জেলার হাসপাতালেই রোগীর চিকিত্সা সুনিশ্চিত করতে হবে। এ বার রেফারের কারণ স্বাস্থ্য দফতরে স্পষ্ট ভাবে জানাতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব। ঘাটালে একাধিক চিকিৎসককে শো-কজও করা হয়েছে বলে খবর।
পশ্চিম মেদিনীপুরের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলায় আসে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দল। নেতৃত্বে ছিলেন খোদ স্বাস্থ্য সচিব অনিল বর্মা। সঙ্গে দফতরের পদস্থ আধিকারিকেরা। ওই দিন সন্ধ্যায় শালবনি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে দলটি। সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা, শালবনির বিএমওএইচ অভিষেক মিদ্যার সঙ্গে বৈঠকও হয়। সূত্রের খবর, রেফার করা নিয়ে সিএমওএইচ, বিএমওএইচের কাছে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর চান প্রধান সচিব। বুঝিয়ে দেন, গ্রামীণ হাসপাতাল সুপার স্পেশালিটিতে উন্নীত হয়েছে। তাও রেফার কেন?
শনিবার সকালে মেদিনীপুর মেডিক্যালে আসেন স্বাস্থ্য কর্তারা। একাধিক ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। সিসিইউ ইউনিট পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য সচিবের নেতৃত্বাধীন দলটি। একটি ওয়ার্ডে গিয়ে রেফারেল খাতা দেখতেই পাননি প্রধান সচিব। খাতা দেখতে না- পেয়ে নিজের অসন্তোষ গোপন করেননি তিনি। মেডিক্যালেও এক বৈঠক হয়। বৈঠকে ছিলেন মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু। ক্যানসার রোগীদের কেন রেফার করা হয়, সেই প্রশ্নও ওঠে। মেডিক্যালের কর্তারা জানান, মেদিনীপুরে রেডিওথেরাপি হয় না। তাই রোগীদের বাঁকুড়া কিংবা কলকাতার হাসপাতালে পাঠাতে হয়। পরে মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু মানেন, “রেফার যাতে কম হয় তা উনি (প্রধান সচিব) দেখতে বলেছেন। আমরা অবশ্যই তা দেখব।” ওয়ার্ডে কেন রেফারেল খাতা ছিল না? পঞ্চাননবাবুর জবাব, “খাতা নিয়ে শুরুতে একটা ওয়ার্ডেই সমস্যা হয়েছিল। সিস্টার বুঝতে ভুল করেছিলেন। ওয়ার্ডে রেফারেল খাতা ছিল। পরে তা দেখানোও হয়েছে।’’
এ দিন ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সচিবের বৈঠক চলাকালীন আবার রোগীর পরিজনেরা বিক্ষোভ দেখান। মেদিনীপুরে বৈঠক সেরে অনিল ভর্মার নেতৃত্বে ৬ সদস্যের দলটি ডেবরায় আসেন। অভিযোগ, স্বাস্থ্যকর্তারা আসায় সকাল ন’টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ওই হাসপাতালের কোনও ওয়ার্ডে রোগীর পরিজনেদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফলে, অনেক রোগী জল পর্যন্ত পাননি।
বিক্ষোভের পরে এসে পৌঁছন নিরাপত্তারক্ষীরা। দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ রোগীর পরিজনেদের হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় হাসপাতালের ওষুধের কাউন্টারে না থাকা ওষুধের তালিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য সচিব। চিকিৎসকেরা কেন চিরকুটে ওষুধের নাম লিখছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। স্বাস্থ্য সচিব অনিল বর্মা শুধু বলেন, “আমরা সরকারি বৈঠকে বসেছিলাম। কোনও মন্তব্য করব না।”
একই প্রশ্ন ওঠে ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও। এ দিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ ঘাটালে আসেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী, প্রধান সচিব অনিল বর্মা-সহ পদস্থ আধিকারিকরা। সদ্য তৈরি হওয়া হাসপাতালের গ্রাউন্ড ফ্লোরের একাধিক ওয়ার্ড ঘুরে তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন। প্রায় দু’ঘন্টার বৈঠকে ঘাটাল হাসপাতালের চিকিৎসা ও পরিষেবার নানান ত্রুটি নিয়ে কৈফিয়ত চান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। হাসপাতালে সাধারণ প্রসবের চেয়ে কেন সিজার বেশি করা হচ্ছে, রেফার রোগীদের বাইরের নার্সিংহোমে ভর্তির বিষয়ে সরকারি চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।
পর্যাপ্ত কর্মী থাকা সত্ত্বেও কেন সবসময় প্যাথোলজি ও এক্সরে বিভাগ খোলা থাকে না তাও কারণ জানতে চান সুপারের কাছে। সুপারকে আগামী সপ্তাহ থেকেই ওই দু’টি বিভাগ ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেন।
বিভিন্ন ইউনিটের রেজিস্টারের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য লিপিবদ্ধ কেন করা হয়নি-তার কারণও জানতে চান সুপারের কাছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা একাধিক চিকিৎসককে শোকজও করেন।