আগে নজর দিন বেহাল রান্নাঘরে, হাসপাতাল পরিদর্শনে পরামর্শ স্বাস্থ্যকর্তাদের

হাসপাতাল সূত্রের খবর, মাটিতে বসেই চলে আনাজ কাটা, কর্মীদের হাতে গ্লাভসের বালাই নেই। কাটা আনাজ মাটিতে পড়ে গেলে তা নিয়ে দৌড় দেয় ইঁদুর। ফাঁক গলে রান্নাঘরের অন্দরে ঢুকে পড়ে বেড়াল

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৬
Share:

বিপজ্জনক: এ ভাবেই এলপিজি সিলিন্ডারের পাশেই আভেন বসিয়ে চলছে রান্না। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের রান্নাঘরে। নিজস্ব চিত্র

ঊর্ধ্বতন অফিসারেরা হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছেন। তাঁদের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের আধিকারিকেরা। রান্নাঘরে পৌঁছেই মুখ ব্যাজার।

Advertisement

প্রসূতি বিভাগের জন্য পৃথক লেবার রুমের সঙ্গে এসএনসিইউ থাকলে ভাল হয়। বৃহস্পতিবার জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন তথা পরিবার কল্যাণ দফতরের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের কাছে পেয়ে এমনই নানা আর্জি জানাচ্ছিলেন হাসপাতালের সুপার-সহ জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা কখনও আশ্বাস দিচ্ছিলেন। আবার কখনও আসছিল পরামর্শ— নতুন বিভাগের চেয়ে, নতুন পরিষেবার চেয়ে যেগুলি চলছে তার মনোন্নয়ন বেশি জরুরি। ঘুরতে ঘুরতে প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা পৌঁছলেন রান্নাঘরে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেখান থেকে বেরিয়ে প্রতিনিধি দলের এক সদস্য বলেই ফেলেন, ‘‘এ তো দেখছি রান্নাঘরের আরও মানোন্নয়ন প্রয়োজন।’’

কী দেখে এই প্রতিক্রিয়া? হাসপাতাল সূত্রের খবর, সুপারের কার্যালয় সংলগ্ন রান্নাঘরে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার কাজ এখনও শেষ হয়নি। মেঝে এখনও সিমেন্টের। ন্যূন্যতম সুরক্ষা বিধি ছা়ড়া পাশাপাশি, ঠেসাঠেসি করে রাখা এলপিজি সিলিন্ডার, আভেন। আর স্বাস্থ্যবিধি! হাসপাতাল সূত্রের খবর, মাটিতে বসেই চলে আনাজ কাটা, কর্মীদের হাতে গ্লাভসের বালাই নেই। কাটা আনাজ মাটিতে পড়ে গেলে তা নিয়ে দৌড় দেয় ইঁদুর। ফাঁক গলে রান্নাঘরের অন্দরে ঢুকে পড়ে বেড়াল। তবে কুকুরের প্রবেশ নিষেধ। দূরে খাবারের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদের। হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় মেনে নিয়েছেন, প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। রান্নাঘরের মান যে উন্নত নয় তা-ও মেনে নিয়েছেন সুপার। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি? সুপারের কথায়, ‘‘এটা ঠিক অনেকসময় কর্মীরা গ্লাভস পরে থাকেন না। আমরা এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াব।’’ ঠিকাদার প্রশান্ত ঘোষের দাবি, ‘‘ভবন জীর্ণ। তাই জানলার ফাঁক দিয়ে বেড়াল ঢোকে। সাধ্যমতো স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা হয়।’’

Advertisement

রাজ্যের পরিবার কল্যাণ দফতরের যুগ্ম সচিব তথা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অতিরিক্ত অধিকর্তা জলি চৌধুরীর নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ পৌঁছয় হাসপাতালে। প্রথমেই তাঁরা যান সুপারের কার্যালয়ে। কিছুক্ষণ সেখানে উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী, অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল, সুপার কৃষ্ণেন্দু-সহ হাসপাতালের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়। তার পরেই সকলে চলে যান জরুরি বিভাগে। এর পরে সেখান থেকে ব্লাড ব্যাঙ্ক, যৌন সুরক্ষা বিভাগ, জেরিয়াট্রিক বিভাগ, শিশু ও জননী সুরক্ষা বিভাগ ঘুরে দেখেন তাঁরা। সেখানে জেরিয়াট্রিক বিভাগে দীর্ঘক্ষণ নথিপত্র পরীক্ষা করেন জলি ও দফতরের টেকনিক্যাল অফিসার শাশ্বতী নাগ। এই বিভাগে সপ্তাহে দু’দিন বয়স্কদের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। বিভাগটি ভাল চলছে দেখে সপ্তাহে আরও একদিন এই বিভাগটি চালানো যায় কি না তা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিভাগগুলি ঘুরে দেখার পরে একে একে পৌঁছন প্রসূতি বিভাগ, শিশু বিভাগ-সহ বেশ কয়েকটি বিভাগে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অতিরিক্ত অধিকর্তা জলি শুধু বলেছেন, ‘‘আমরা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে যে সমস্ত পরিষেবা চলছে সেগুলি দেখতে এসেছি। এর বাইরে যা কিছু বলার তা হাসপাতালের সুপার বলবেন।’’ প্রসূতি বিভাগ, শিশু বিভাগ ঘুরে দেখার ফাঁকেই জলিরা পৌঁছেছিলেন রান্নাঘরে। ছিলেন মিনিট দশেক। তার ফাঁকে অব্যবস্থা দেখে মেজাজ হল তিরিক্ষে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement