প্রতীকী ছবি
চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। ফের অপমৃত্যু নারায়ণগড়ের কাশীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মামনসা গ্রামে। সিপিএম নেতার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের পরে এ বার মিলল এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ।
শনিবার সকালে বাড়িতেই মেলে মঙ্গল নায়েক (২৯) নামে ওই যুবকের দেহ। ঘরের ছাউনির বাঁশ থেকে দড়ির ফাঁসে ঝুলছিল দেহটি। শুক্রবার বিকেলে মঙ্গলের বাড়ির সামনের পিচ রাস্তাতেই পড়েছিল সিপিএম নেতা দেবেন্দ্রনাথ ভক্তার রক্তাক্ত দেহ। দেবেন্দ্রনাথবাবু সিপিএমের নারায়ণগড় লোকাল কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ করছেন পরিজন ও সিপিএম নেতৃত্ব। মঙ্গলের অপমৃত্যুর পরে দেবেন্দ্রনাথবাবুর মেয়ে অপর্ণা দিগার এ দিন বলেন, “বাবাকে কিছুদিন আগে মঙ্গলের বাড়ির লোকজন মাথায় আঘাত করেছিল। আমাদের ধারণা বাবার মৃত্যুতে মঙ্গলের হাত রয়েছে। তাই ও আত্মহত্যা করেছে।”
একই সুরে সিপিএমের বেলদা জোনাল সম্পাদক মদন বসু বলেন, “আমাদের ধারণা দেবেন্দ্রনাথ ভক্তাকে খুনের পিছনে কোনওভাবে যুক্ত ছিল মঙ্গল নায়েক।” যদিও মঙ্গলের স্ত্রী পাখি নায়েকের দাবি, “আমার স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ওষুধ খেতেন। বছর কয়েক আগেও এ বার গলায় দড়ি দিয়ে মরতে গিয়েছিলেন।” ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গল কোনওদিন প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেননি। তবে এক সময় সিপিএম সমর্থক হিসেবে দেবেন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে তাঁর ভালই সম্পর্ক ছিল। তবে বছর কয়েক আগে দুই পরিবারের অশান্তি হয়। তখনই দেবেন্দ্রবাবুকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। রাজ্যে পালাবদলের পরে মঙ্গল তৃণমূলের দিকে ঝুঁকেছিলেন।
মঙ্গলের স্ত্রী পাখি বলেন, “আমার স্বামী কখনই সরাসরি রাজনীতি করেননি। আগে সিপিএমকে সমর্থন করতেন, আর এখন তৃণমূলকে ভোট দিতেন।” তবে দেবেন্দ্রনাথবাবুর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকে মঙ্গল বিষণ্ণ ছিলেন বলে তাঁর স্ত্রী জানিয়েছেন। শুক্রবার রাতে স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করলেও বারবার জানতে চাইছিলেন, ‘কাকাকে কে মারল?’
এ দিন ভোরে পাখি শৌচকর্ম করতে মাঠে গিয়েছিলেন। তখন ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন মঙ্গল। ফিরে এসে পাখি দেখেন, ঘরের দরজা বন্ধ। ভিতর থেকে গোঙানির শব্দ আসছে। পরে দরজা খুলে মঙ্গলের ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। এ দিন সকালে দেবেন্দ্রনাথবাবুকে খুনের প্রতিবাদে মিছিল বেরোয়। পরে গ্রামে গিয়েছিলেন লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক বলাই নায়েক।
তিনিও বলেন, “মনে হচ্ছে দু’টি মৃত্যুর মধ্যে কোনও যোগাযোগ রয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে সত্য সামনে আনুক।”