হুমকি দিয়ে এক সংস্থার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল হলদিয়ার পুরপ্রধান শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে। যদিও শেষ পর্যন্ত স্থানীয় কাউন্সিলরের হস্তক্ষেপে কাজ শুরু হয়েছে ওই সংস্থায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলসিএল লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থা ৫ বছর ধরে সুপার মেলটার প্রাইভেট লিমিটেড এবং সুপার শক্তি মেটালিক প্রাইভেট লিমিটেড নামে দুটি সংস্থার হয়ে শুল্ক সংক্রান্ত এবং আমদানি করা পণ্য পরিবহণের কাজ করতো। ওই সংস্থার কাজ ছিল হলদিয়া বন্দরে ওই দুই সংস্থার আমদানি করা ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, তুলো-সহ অন্যান্য দ্রব্য হলদিয়া বন্দর থেকে জামুরিয়া এবং দুর্গাপুরের কারখানায় পৌঁছে দেওয়া। মাসখানেক আগে এসসিএল লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ওই দুই সংস্থার ব্যবসায়িক সমস্যা তৈরি সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ। ওই দুই সংস্থা তাদের পণ্য পরিবহণের জন্য অন্য এক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার বিষয়ো তোড়জোড় শুরু করে। এটা জানতে পেরে এলসিএল লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেড ওই দুই সংস্থার মালবোঝাই দশটি কন্টেনার নিজেদের কাছেই রেখে বকেয়া বিল ফেরত চায়। কিন্তু ওই দুই সংস্থা বকেয়া বিল মিটিয়ে দেয়নি অভিযোগ। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা বাধে।
সুপার মেল্টার প্রাইভেট লিমিটেডের তরফে সুব্রত কুমার বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষ থেকে বকেয়া বিল মেটানো হবে না এ কথা একবারও বলা হয়নি। আমরা শুধু ওই সংস্থার কাছে আমাদের কন্টেনার ফেরত চেয়েছিলাম। বিষয়টি পুরপ্রধানকেও জানাই।’’
এলসিএল লজিস্টিক প্রাইভেট সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, দু’পক্ষের মধ্যে কাছে গেল আর কেনই বা তিনি এসে এখানে কাজ বন্ধ করে দিলেন তা তারা বুঝতে পারছেন না। অভিযোগ, মঙ্গলবার বিকেল চারটে নাগাদ পুরপ্রধান শ্যামল আদক এলসিএল লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেডের অফিসে যান। মিনিট দুয়েক পরে সেখান থেকে তাঁকে বেরিয়ে আসতেও দেখা যায়। সিসিটিভিতেো সেই ছবি দেখা গিয়েছে। ওই সংস্থার আধিকারিক পৃথ্বীশ পুরকাইতের আভিযোগ, ‘‘তাঁর নির্দেশ ছাড়া কোনও কাজ হবে না বলে হুমকি দেন পুরপ্রধান শ্যামল আদক। অফিসে ঢুকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান। তারপর থেকেই বন্ধ সংস্থার কাজকর্ম।’’
যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে পুরপ্রধান শ্যামল আদকের দাবি, ‘‘আমি ওই দিন ওই সময় ওখানে যাইনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে অপপ্রচার চলছে।’’ গোটা ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন এলসিএল লজিস্টিক প্রাইভেটের কর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা বছর পাঁচেক আগে যে ভাবে এবিজি হলদিয়া ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল, ঠিক সে ভাবেই হয়তো এই সংস্থাকেও শিল্পশহর ছেড়ে চললে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে কর্মহীন হয়ে পড়বেন সংস্থার প্রায় দেড়শ কর্মী। বুধবার সকালে ফের কাজ শুরু করার দাবিতে শিল্পসংস্থার গেটের সামনেই ধর্নায় বসেন তাঁরা। পদত্যাগ দাবি করেন পুরপ্রধানের। শেষপর্যন্ত স্থানীয় কাউন্সিলর আসগর আলি ও ভবানীপুর থানার পুলিশের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে। ফের কাজ শুরু হয় ওই সংস্থায়।
আসগর আলীর বক্তব্য, ‘‘দুটি শিল্প সংস্থার মধ্যে সমস্যা হয়েছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে সমস্যার কথা আমাকে জানানো হলে আমি গিয়ে ফের কাজ শুরু করতে অনুরোধ জানাই। তৃণমূল সরকার গেট বন্ধ করে সমস্যা সমাধানের পক্ষপাতী নয়।’’
এই ঘটনায় শিল্পশহরে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই ফের সামনে এল বলে মত রাজনৈতিক মহলের।