—প্রতীকী চিত্র।
ব্যাঙ্কে কাজের সূত্রে উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়া এলাকায় থাকত ছেলে। শনিবার সকাল থেকে ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না বাবা-মা। ছেলে যে এক বৃদ্ধকে খুন করে গ্রেফতার হয়েছে, পুলিশের কাছে তা জানতে পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
শনিবার সকালে কলকাতার নিউটাউন এলাকায় এক বৃদ্ধের ব্যাগবন্দি রক্তাক্ত দেহ মিলেছে। সুবোধকুমার সরকার (৭০) নামে ওই বৃদ্ধকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন এগরার যুবক সৌম্যকান্তি জানা। পেশায় ব্যাঙ্ক কর্মী সৌমকান্তি বেলঘরিয়ায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। শনিবার রাতে একটি গাড়ি ভাড়া করে তিনি এগরার দিকে আসছিলেন। এগরা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে পটাশপুর থানার পুলিশ নাকা তল্লাশি চালাচ্ছিল। সে সময় সৌম্যকান্তিদের গাড়িতে রক্তের দাগ দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। তাঁদের আটক করা হয়। পরে সামনে আসে, সৌম্যকান্তি সুবোধকে হত্যা করে পালিয়ে আসছিলেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, নিমতার একটি ব্যাঙ্কে রিলেশনশিপ ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন সৌম্য। ছাপাখানার ব্যবসায়ী সুবোধের ওই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট ছিল। সেই সুবাদেই দু’জনের পরিচয়। পুলিশ সূত্রের খবর, সৌম্য কোনও ভাবে বৃদ্ধের অ্যাকাউন্ট থেকে সাত লক্ষ টাকা তাঁর পরিচিতের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেন। বৃদ্ধ ঘটনাটি জানতে পেরে সৌম্যকে চেপে ধরেন। এর পরে সৌম্য গত দু’-তিন মাস ধরেই সুবোধকে সেই টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন। বেলঘরিয়ায় নন্দননগরে সৌম্যের বাড়ির কাছেই থাকতেন বৃদ্ধ।
টাকা দেওয়া নাম করে বৃদ্ধকে শুক্রবার বেলঘরিয়া ভাড়া বাড়িতে ডাকেন অভিযুক্ত যুবক।অভিযোগ, সুবোধ বাড়িতে এলে সৌম্য তাঁকে ধাক্কা মারেন। দেওয়ালে লেগে বৃদ্ধের মাথা ফেটে যায়। পরে তাঁর শ্বাসরোধ করে সৌম্য, এমনটাই জানান পুলিশ আধিকারিকেরা। পুলিশ জানতে পেরেছে, দেহ লোপাট করতে রাতে ‘অ্যাপ ক্যাবে’ গাড়ি ভাড়া করেন সৌমকান্তি। ট্রলি ব্যাগে দেহ নিয়ে নিউটাউনে প্রত্যন্ত এলাকার নালায় ফেলে দেন। ওই গাড়িতে করে এগরা পালিয়ে আসছিলেন। এগরার এসডিপিও দেবীদয়াল কুণ্ডু বলেন, ‘‘শনিবার রাতে টেকনো সিটি থানার পুলিশ এগরার যুবক সৌমকান্তি জানাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে।’’
সৌম্যকান্তি স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে। উচ্চ শিক্ষিত। বাবা অবসরপ্রাপ্ত ডাককর্মী। জামাইবাবু কলকাতা পুলিশের অফিসার পদে কর্মরত। এমন পরিবারের ছেলের কাণ্ডের কথা পটাশপুর থানার পুলিশ মারফত পান বাবা ও মা। তার পরে এ দিন সকাল থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা। পরিবার সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারিতে কাঁথির সাতমাইল এলাকায় এক তরুণীর সঙ্গে সৌম্যকান্তি আইনি বিয়ে সেরেছেন। আগামী ১৮ এপ্রিল এগরার বাড়িতে আনুষ্ঠানিক বিয়ের সমস্ত আয়োজন সেরে ফিরেছিল দুই পরিবার। এখন জামাইয়ের কীর্তিতে হতবাক পাত্রীর পরিবারের লোকজনও। সৌম্যকান্তির জেষ্ঠতুতো দাদা শান্তনু জানা বলেন, ‘‘উচ্চ শিক্ষিত। ব্যাঙ্কে ভাল পদে কর্মরত একটি ছেলে খুন করতে পারে, আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। সামনের মাসে ওঁর বিয়ের কথা ছিল।’’ আপাতত সেই বিয়ের কী হবে, তা জানেন না জানা পরিবারের সদস্যরা।