বিেয়র মরসুমেও ফাঁকা সোনার দোকান। বসে কারিগরও। নিজস্ব চিত্র
দিন দিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এদিকে ১০ গ্রাম সোনার দাম ৫০ হাজার ছুঁইছুঁই। এই দুয়ের জোড়া ধাক্কায় বিয়ের ভরা মরসুমেও সোনার গয়নার চাহিদা কমেছে।
ঘাটালের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, লকডাউনের সময়ে ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। সেই দামই চড়চড়িয়ে বাড়তে শুরু করেছে। বিয়ের মরসুমে সোনার এই দাম বৃদ্ধিতে চাপ বেড়েছে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তদের। প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারেও।
দেশজুড়ে এখন ‘আনলক ২’ চলছে। এই পর্বে বিয়ের অনুষ্ঠানের নিয়ম শিথিল হয়েছে। তাই রাজ্যের অন্য প্রান্তের মতো ঘাটাল মহকুমাতেও সংখ্যায় কম হলেও বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। এই সময়ে নিমন্ত্রিতের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত। তাই অনেকে ছেলে-মেয়েকে বেশি পরিমাণ সোনার গয়না দেওয়ার কথা ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু দামের ঊর্ধ্বগতিতে সেই ভাবনায় দাঁড়ি টানতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। যেমন চন্দ্রকোনার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী বিমল পান। তিনি বলছিলেন, “মেয়ের বিয়ে। কিন্তু এখন সোনার দাম প্রতি দশ গ্রামে কমবেশি আট হাজার টাকা বেড়ে গিয়েছে। তাই বাজেট কমিয়ে আপাতত অল্প কিছু গয়না কিনে কাজ সেরেছি। দাম কমলে গয়না তৈরি করে দেব।”
ঘাটাল-দাসপুর স্বর্ণশিল্পের জন্য বিখ্যাত। ঘাটাল মহকুমায় ছোট-বড় মিলিয়ে একশোর কাছাকাছি সোনার দোকান রয়েছে। কিন্তু ঘাটাল, দাসপুর, সোনাখালি থেকে চন্দ্রকোনা— সর্বত্রই সোনার বাজার এখন ফাঁকা। ভরা মরসুমেও কাজের চাপ নেই কারিগরদের। চন্দ্রকোনা ঠাকুরবাড়ি বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আশিস কামিল্যা, দাসপুর শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ পাখিরারা বলছিলেন, “যখন সোনার দাম কম ছিল, তখন লকডাউন ছিল। এখন নিয়ম শিথিল হয়েছে। বিয়ে-সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। কিন্তু এখন আবার বরাতই নেই!”
ঘাটাল মহকুমার অনেক ভূমিপুত্র ভিন্ রাজ্যে গিয়ে সোনার কাজ করেন। লকডাউন পর্বে তাঁদের সিংহভাগই বাড়ি ফিরে এসেছেন। তাঁদের অনেকেই স্থানীয় বাজারে কাজ খুঁজছেন। কিন্তু কাজ দেবে কে! বিক্রি কমে যাওয়ায় স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের একাংশেরই কাজ নেই।
ঘাটাল স্বর্ণশিল্পী ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার সমিতির সম্পাদক প্রদীপ সাহার আক্ষেপ, “করোনা আতঙ্ক ও দামবৃদ্ধির ধাক্কায় ব্যবসা লাটে উঠেছে। কর্মীদের বেতন দিতেও সমস্যা হচ্ছে।”