ঘাটাল পুরসভার ভবন, ইনসেটে প্রতিষ্ঠা সালের ফলক। —নিজস্ব চিত্র
তবে কি উৎসবে সাময়িক বিরতি!
ঘাটাল পুরসভার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। পুরসভার বয়স হয়েছে দেড়শো বছর। পুর কর্তৃপক্ষ ভেবেছিলেন, জাঁক করে পূর্তি অনুষ্ঠান করবেন। গত ১ মে দেড়শো বছর পূরণ হয়েছে পুরসভার। কিন্তু সে উপলক্ষে কোনও অনুষ্ঠান হয়নি ঘাটালে।
কেন এমন হল? জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে কি লোকসভা ভোটের ফলে ধাক্কা খেয়েই আপাতত উৎসব-অনুষ্ঠানে কিছুটা রাশ টানতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব! বিরতি আপাতত। কারণ, পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, সমাপ্তি অনুষ্ঠান ঘটা করে হবে। কিন্তু সমাপ্তি অনুষ্ঠান হলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাদ থাকবে কেন? যেখানে আগেও মেলা- উৎসব নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ উড়িয়ে তার পক্ষেই সওয়াল করতেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীরা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সে সবই আগের কথা। ভোটের পরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি এখন দলের কাজ বেশি করবেন।
দেড়শো বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে সাময়িক বিরতি প্রসঙ্গে পুরপ্রধান বিভাস ঘোষ শুধু বলছেন, “এখনই পুরসভার সার্ধ শতবর্ষ পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান হবে না। সমাপ্তি অনুষ্ঠান ঘটা করে হবে।” শহর তৃণমূলের সভাপতি অরুণ মন্ডল অবশ্য রাখঢাক না রেখেই বলছেন, “এখন অনুষ্ঠানের কোনও পরিকল্পনা নেই। কাউন্সিলর-সহ সকলে সংগঠনের কাজে ব্যস্ত।”
লোকসভা ভোটের ফল বলছে, ১৭ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টিতে এগিয়ে বিজেপি। ৭টি ওয়ার্ডে এগিয়ে তৃণমূল। শহরের প্রাণকেন্দ্রে কুশপাতা,কোন্নগর এলাকায় বহু ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। তাই আপাতত উৎসবে ছেদ। জোর সাংগঠনিক মেরামতিতে। অথচ পরিকল্পনা তো কম হয়নি। পুরসভা সূত্রের খবর, ভোটের আগে দেড়শো বছর পূর্তি উৎসবের অনুষ্ঠান পরিকল্পনার লক্ষ্যে শহরের বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে এক কনভেনশনের আয়োজন করেছিল পুরসভা। ঠিক হয়েছিল, উদযাপন উপলক্ষে শোভাযাত্রার মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হবে। তারপর খেলাধূলা-সহ নানা প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হবে। এ ছাড়াও থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। সেখানে স্থানীয় ও কলকাতার শিল্পীদের অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
শুধু অনুষ্ঠান নয়, পুরসভার দেড়শো বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে নয়া পরিষেবা ঘোষণারও পরিকল্পনা ছিল। শহরে জলের সমস্যা মেটাতে রুপনারায়ণ নদের জল ব্যবহার করে পরিস্রুত করে তা সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। ইতিমধ্যই ৭০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের ডিপিআরের কাজ চলছে। পুরবাসীদের জন্য পানীয় জল প্রকল্পের কথা ঘোষণা করার কথা ছিল পুরসভার। কিন্তু ভোটের ফলে মন খারাপ। তাই উৎসবে সাময়িক বিরতি।
তৃণমূল শিবিরের এক অংশের ব্যাখ্যা, বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে খেলা-মেলা কম হয়নি। এখন আচমকাই দেড়শো বছরের মতো একটা বড় ঘটনা উদ্যাপন করা না হলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। তাই অনুষ্ঠান বন্ধ করা একেবারেই ঠিক হবে না।
সার্ধশতবর্ষের অনুষ্ঠান তাই শুরু বদলে শেষে।