বসে: তিনদিন ধরে তেমন বেচাকেনা নেই। নিজস্ব চিত্র
বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনায় রাজ্য জুড়ে উদ্বেগ ছিল ক’দিন আগেই। গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জানিয়েছিলেন, সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করতে হবে। উৎসব পালনের পরিবেশ অবশ্য নেই ঘাটালে। চারিদিকে জল। খাবার জোটানোই এখন দায়। পানীয় জলও অমিল। রাখির কথা ভাবে কে?
গলা অবধি জল নিয়ে এখনও বেঁচে আছে দাসপুরের উত্তরবাড়, মদপুকুর, বাদশামো়ড়, বিষ্ণুপুর, বেনাই গ্রাম। পাশাপাশি বাস হিন্দু-মুসলমানের। সাঁতার কেটে ত্রাণ আনতে যাওয়া মানুষগুলো একে অন্যের ভরসা। তাঁদের কাছে এখন বিপদ রোগ-ভোগ বা বিষধর সাপ। মাথার উপর ছাদটুকুও টলমল। এমন পরিস্থিতিতে রাখির উৎসব যেমন নেই, নেই অশান্তির ফুরসতও।
রবিবার নতুন করে জল ঢুকছে ঘাটাল ব্লকের বিভিন্ন এলাকায়। নিম্নচাপের ফলে ফের বৃষ্টি নেমেছে। শিলাবতীর জলও ফের ফুলছে। সকালেই ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়কের উপর মনসাতলা চাতালে জল উঠেছে। বন্ধ হয়ে যায় বাস চলাচল। প্রতাপপুরে ভাঙা বাঁধ দিয়েও জল ঢুকতে শুরু করেছে। জলের স্রোতে বাঁধ মেরামতির কাজও ব্যাহত হচ্ছে। দিনরাত এক করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেচ দফতর। ইতিমধ্যেই দাসপুরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে জল ঢুকেছে। শনিবার রাত থেকেই শিলাবতীর জল বাড়ছে। পাড় উপছে চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের বহু এলাকা নতুন করে জলমগ্ন হয়েছে। ঘাটাল শহরের ১২টি ওয়ার্ডেও জল বাড়ছে। এখনও দাসপুর-২ ব্লকের ১০টি অঞ্চলের শতাধিক গ্রাম জলের তলায়। শনিবার পর্যন্ত ওই সব এলাকায় জল নামছিল। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে জল বাড়ছে। ফের জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কায় শহরের মানুষও।
যদিও মহকুমা সেচ আধিকারিক উত্তম হাজরা বলেন, “এখনও পর্যন্ত জলাধার থেকে জল ছাড়ার কোনও খবর নেই। নদীর জল বাড়লেও আগের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না। আমরা সতর্ক।’’ তবে নিচু এলাকাগুলি যে ফের জলমগ্ন হবে তা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।
ফলে রাখি নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারও। সরকারি দফতরগুলিতেও নামমাত্র উৎসব পালন করা হবে। মহকুমার বেশিরভাগ স্কুল এখনও বন্ধ, বন্ধ ঘাটাল ও চাঁইপাট কলেজও। ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকী রঞ্জন প্রধান বলেন, “ঘাটালে সরকারি ভাবে ঝাঁকজমক করে উৎসবটি পালন করার পরিস্থিতি নেই। অফিস গুলিতে ছোট করে অনুষ্ঠান হবে।” পুরসভাও অনুষ্ঠান করছে না। চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ বলেন, “ফের জল বাড়ছে। ফলে অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।”
ঘাটাল শহরের জল নেমেছে। তাই দোকান খুলে বসেছিলেন কৃষ্ণেন্দু পাল। কিন্তু বিক্রিবাটা তেমন নেই। কৃষ্ণেন্দু বললেন, “এ বার রাখি কেনার হিড়িকও নেই। কেই বা কিনবে। কারও তো মন ভাল নেই।”