রাস্তা থেকে মাঠ, দগদগে পুজোর ক্ষত

পুজো মিটে গিয়েছে। তবে পুজোর ক্ষত এখনও যায়নি। বড় মাঠগুলো বেহাল। রাস্তাতেও জায়গায় জায়গায় তোরণ। সব মিলিয়ে পথ চলাই দায় শহর মেদিনীপুরে।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫৩
Share:

রাঙামাটি মাঠে এখনও পড়ে রয়েছে মণ্ডপের বাঁশ। কাজে গতি নেই। লাগানো রয়েছে ব্যানার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

পুজো মিটে গিয়েছে। তবে পুজোর ক্ষত এখনও যায়নি। বড় মাঠগুলো বেহাল। রাস্তাতেও জায়গায় জায়গায় তোরণ। সব মিলিয়ে পথ চলাই দায় শহর মেদিনীপুরে।

Advertisement

মেদিনীপুর শহরের বেশিরভাগ বড় বারোয়ারি পুজোই হয় মাঠে। রাঙামাটি, বার্জটাউন, বিধাননগর, শরৎপল্লি, অরবিন্দনগর, জুগনুতলা, রবীন্দ্রনগরের মাঠে পুজোর সময় মেলাও বসে। মেলা মানে হরেক রকম স্টল। খাওয়াদাওয়া-কেনাকাটা। এখন সেই মাঠগুলো বেহাল। এ দিক-সে দিকে পড়ে রয়েছে বাঁশ। অনেক জায়গায় মণ্ডপ খোলা হয়নি। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কাগজ-প্লাস্টিকের ব্যাগ, এমনকী পেরেকও। মাঠ জুড়ে ছোট-বড় গর্ত। এমনিতেই শহরে মাঠের সংখ্যা কম। যেগুলো রয়েছে তার যদি এমন হাল হয়, খেলাধুলো হবে কোথায়। প্রাতঃভ্রমণ ও সান্ধ্যভ্রমণেই বা শহরবাসী কোথায় যাবেন! মেদিনীপুরের মানুষ তাই অসন্তুষ্ট, বিশেষ করে ছোটরা। সায়নদীপ রায়, সঞ্চারী পাত্রদের মতো খুদেদের কথায়, “মাঠ পরিষ্কার নেই। তাই খেলতে যেতে পারছি না। এ দিকে পুজোর ছুটিও তো ফুরিয়ে আসছে।’’ এই অবস্থায় একমাত্র ভরসা গোলকুয়াচকের কাছে কলেজ মাঠ। পুজো না হওয়ায় ওই মাঠটি অক্ষত রয়েছে।

চলার পথেও সেই পুজোর ক্ষত। শারদোৎসবের সময় বেশিরভাগ পুজো কমিটি রাস্তা জুড়ে তোরণ তৈরি করে। তাতে থাকে হরেক বিজ্ঞাপন। পুজো মিটেছে এক সপ্তাহ হল। কিন্তু এখন বেশিরভাগ তোরণ খোলা হয়নি। শহরের প্রধান রাস্তাগুলো সঙ্কীর্ণ। তোরণ থাকায় তা আরও সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে। সমস্যা যে গুরুতর তা মানছে পুরসভা। তাও পুর-কর্তারা হাত গুটিয়ে বসে কেন? মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘‘তোরণগুলো দশমীর পরপরই খুলে নেওয়ার কথা পুজো উদ্যোক্তাদের বলা হয়েছিল। এখনও রাস্তায় অনেক তোরণ রয়েছে। আর দু’-তিনদিন দেখা হবে। না-হলে এ ব্যাপারে পুরসভা পদক্ষেপ করবে।’’ আর শহরের মাঠগুলোর হাল ফেরানোর ব্যাপারে কী করা হবে? উপ-পুরপ্রধানের দাবি, ‘‘মাঠগুলো পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এখনও মণ্ডপ খোলা চলছে। তাই সব মাঠ ভাল ভাবে পরিষ্কার হয়নি। প্রয়োজনে মাঠগুলো পরিদর্শন করা হবে।’’ পুরসভার আশ্বাস, তেমন হলে পুর-কর্তারা সাফাই কাজের তদারকি করবেন।

Advertisement

শহর জুড়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে পুজোর তোরণ। মেদিনীপুরের বিভিন্ন রাস্তায় যানজট হচ্ছে নিয়মিত।

মেদিনীপুর শহরের যেখানে-সেখানে রাস্তার উপর তোরণ নতুন কিছু নয়। কোনও উৎসব-অনুষ্ঠান মানেই রাস্তা আটকে মাথা তোলে তোরণ। অনুষ্ঠান মিটে গেলেও তা থেকে যায়। সমস্যা দিন দিন জটিল হচ্ছে বলেই অভিযোগ। শহরবাসীর তাই বক্তব্য, জনবহুল এলাকায় তোরণ না তৈরি করাই ভাল। তোরণ থাকলে যানজট হয়। এখন যেমন কালেক্টরেট মোড় থেকে কেরানিতলার রাস্তায় পরপর কয়েকটি তোরণ রয়েছে। তোরণ রয়েছে জেলা পরিষদ রোড, বিধাননগর, অরবিন্দনগর প্রভৃতি এলাকায়। ফলে, এই সব এলাকায় চলাফেরায় অসুবিধা হচ্ছে। তাছাড়া, এতে শহরের সৌন্দর্যও বিঘ্নিত হয়। শহরের বাসিন্দা সুমিত দাস, সুজাতা পালদের বক্তব্য, ‘‘ছোট রাস্তাতেও তোরণ রয়েছে। প্রতিটি শহরের একটা নিজস্ব চরিত্র রয়েছে। সেখানে অপরিকল্পিত ভাবে তোরণ তৈরি করা শহরের রুচি এবং সৌন্দর্য দুইয়েরই পরিপন্থী।’’

শহরবাসী তাই চাইছেন, রাস্তা ও মাঠগুলো দ্রুত আগের চেহারায় ফিরুক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement