সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। —ফাইল চিত্র।
সবে বন্যা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুর। চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্য সরকারের কোষাগারেরও না কি ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ দশা! তাও উৎসবে কোনও খামতি নেই।
এর আগে রাজ্যে ঘটা করে তৃণমূল সরকারের চতুর্থ বর্ষপূর্তি উদ্যাপন হয়েছে। জেলায় জেলায় প্রচার-ট্যাবলো বেরিয়েছে। এ বার জেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রদর্শনীতে হতে চলেছে। অর্থাত্, প্রায় মেলা বা উত্সবের মতো। একদিন নয়, তিন দিন ধরে চলবে এই কর্মসূচি।
উপলক্ষ্য ওই একই, তৃণমূল সরকারের চতুর্থ বর্ষপূর্তি। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচনের আগে ফের উত্সবে মাততে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর। ইতিমধ্যে নবান্ন থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশও চলে এসেছে জেলায়। কি ভাবে প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে, কী কী অনুষ্ঠান হবে, তা জানানো হয়েছে। তালিকাটা খুব ছোট নয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী ২৯-৩১ অগস্ট মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হলে এই বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান হবে। এর প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মাঝেমধ্যেই দাবি করেন, রাজ্য কোষাগারের অবস্থা খারাপ। কেন্দ্র টাকা কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে! তাই তিনি চেয়েও পর্যাপ্ত উন্নয়ন করতে পারছেন না। তাও কেন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মা-মাটি-মানুষের সরকারের বর্ষপূর্তি পালন? তৃণমূল সরকারের কাছে মানুষের চাহিদা কী ছিল, সেই চাহিদা পূরণে এখনও পর্যন্ত সরকার কোন দফতর কী কাজ করতে পেরেছে, সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা লক্ষ্য কী— এ সবের ফিরিস্তি দেওয়ার আড়ালে নিজের ঢাক নিজে পেটানো? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তী বলেন, “মেলা আর উত্সব করেই তো হাজার হাজার টাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একশো দিনের কাজের মজুরির টাকা বাকি। এ সব দিকে নজর নেই। দান-খয়রাতি আর উত্সবে মা-মাটি-মানুষের সরকার একেবারে অকৃপণ! সরকারের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন করার নামে যথেচ্ছ টাকা খরচ করার মানে হয়? রাজ্য না কি স্বর্গসুখে আছে!” তাঁর মন্তব্য, “উনি (মুখ্যমন্ত্রী) গান-বাজনা নিয়ে মেতে আছেন! মানুষকেও তাত্ক্ষণিক উন্মাদনায় মাতিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন!” বিজেপির শহর সভাপতি অরূপ দাস বলেন, “সরকারের বর্ষপূর্তি পালন করে সরকারি অর্থের অপচয়ই করা হচ্ছে। যে হাজার হাজার টাকা এই অনুষ্ঠানে ব্যয় হবে, সেটা কার টাকা? সাধারণ মানুষের টাকা।” শহর কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন খান বলেন, “এ সব না করে রাজ্য সরকার বরং উন্নয়নের দিকে নজর দিতে পারত। নতুন শিল্প হচ্ছে না। পুরনো শিল্পও বন্ধ হচ্ছে। রাজ্যে চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। লগ্নি টানতে রাজ্য যতই এদিক- ওদিক দৌড়ক না কেন, লগ্নিকারীদের মানচিত্রে পশ্চিমবাংলা ব্রাত্যই!”
এর আগেও জেলায় তৃণমূল সরকারের চতুর্থ বর্ষপূর্তি উদ্যাপন হয়েছে। অবশ্য তিন দিন ধরে প্রদর্শনী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়নি। গত মে-তে একদিনই ব্লকে ব্লকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের প্রকল্প যেমন কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, শিক্ষাশ্রী, লোকপ্রসার প্রকল্প প্রভৃতির সাফল্যের দিকগুলো তুলে ধরা হয়। প্রতি মহকুমায় দু’টি করে প্রচার-ট্যাবলো বেরোয়। যেখানে লোকশিল্পীরা ছিলেন। ট্যাবলো থেকেও সরকারের প্রকল্পগুলোর সাফল্যের দিকগুলো তুলে ধরা হয়। এ বারের অনুষ্ঠানেও লোকশিল্পীদের যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গোড়ায় ঠিক ছিল, এই কর্মসূচি হবে ৭-৯ অগস্ট। পরে তা পিছিয়ে যায়। ঠিক হয় কর্মসূচি হবে ১৭-১৯ অগস্ট। তা-ও পিছিয়ে যায়। এ বার ঠিক হয়েছে কর্মসূচি হবে ২৯-৩১ অগস্ট। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্তা মানছেন, “স্পষ্ট ভাষায় বললে এই অনুষ্ঠান হবে উন্নয়নের প্রচার করার জন্য। এই চার বছরে কি হয়েছে, কি করার পরিকল্পনা রয়েছে, তাই মানুষকে জানানোর জন্য।” অন্য এক আধিকারিক অবশ্য বলছেন, “এ নিয়ে বিতর্কের কী আছে? সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। অনেক শিল্পী আসবেন। এঁদের রোজগারের একটা সুযোগও তৈরি হল। এটা তো ভাল।”
বিরোধীদের যাবতীয় কটাক্ষ ফিরিয়ে মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “ওরা (বিরোধীরা) শুধু কুত্সা-অপপ্রচার করতেই ব্যস্ত। এই কুত্সা-অপপ্রচারের জবাব সাধারণ মানুষই দেবেন। গত পুরভোটে একটা জবাব পেয়েছে। আগামী বিধানসভা ভোটেও জবাব পাবে। এই অনুষ্ঠান সামাজিক উন্নয়নেরই অঙ্গ। জঙ্গলমহল-সহ গোটা জেলায় শান্তি বজায় রাখতে সরকার কত পদক্ষেপ করছে। এটা ওরা মেনে নিতে পারছে না।’’ প্রদর্শনীতে একাধিক দফতরের পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টল থাকার কথা। পুলিশেরও একটা স্টল থাকতে পারে। যেখানে পুলিশের নানা সামাজিক কাজকর্মের ছবি প্রদর্শিত হবে। অন্যদিকে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কলকাতার প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরাও যোগ দেবেন।