জঙ্গল পথে আচমকা বুনো হাতির সামনে পড়ে গেলে কী ভাবে নিজের প্রাণ বাঁচানো যাবে, লোকালয়ে বন্য প্রাণীর আনাগোনা রোখার উপায়ই বা কী— বন্যপ্রাণ-প্রেমীদের সহযোগিতায় জঙ্গল এলাকার গ্রামবাসীদের সচেতন করতে উদ্যোগী হল বন দফতর।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘বন্যপ্রাণ সাথী’ প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও এই প্রকল্পে বন্যপ্রাণ সম্পর্কে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামবাসীদের নানা বিষয়ে সচেতন করবেন ‘বন্যপ্রাণ সাথী’রা। প্রথমে মেদিনীপুর বন বিভাগের অন্তর্গত এলাকায় এই প্রকল্পটি রূপায়িত হবে। এর ফলে, প্রতিটি জঙ্গলে বন্য প্রাণী সম্পর্কে যেমন খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। একইসঙ্গে, হাতির হানায় প্রাণহানির সংখ্যা এবং ফসল ও সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমানো যাবে বলে আশাবাদী বন দফতর।
এই প্রকল্পে প্রতিটি বন বিভাগ এলাকায় একাধিক ‘বন্যপ্রাণ সাথী’ নিয়োগ করা হবে। ‘বন্যপ্রাণ সাথী’ পদটি সম্পূর্ণ অবৈতনিক। সেবামূলক স্বেচ্ছাশ্রমদান করবেন বন্যপ্রাণ সাথী-রা। বন্যপ্রাণ সাথী পদের জন্য ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যে কেউ আবেদন করতে পারবেন। বন দফতরের ওয়েবসাইটে ১৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত আবেদনপত্র পাওয়া যাবে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আবেদনকারীকে রাজ্যের বাসিন্দা হতে হবে। শারীরিক ভাবে সক্ষম হতে হবে। নিজের খরচ নিজেকে বহন করতে হবে। রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার এক কর্তা বলেন, “বন্যপ্রাণ নিয়ে বহু মানুষ স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজকর্ম করেন। সেই সব মানুষদের বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এমন মানুষদের দিয়ে সচেতনতার কাজটা সবচেয়ে ভাল ভাবে করা সম্ভব।”
বন্যপ্রাণ সাথীরা জঙ্গল এলাকার গ্রামে-গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের ঘরোয়া মদ তৈরির বিপদ থেকে সচেতন করবেন। কারণ, মদের টানে হাতিরা বাড়ি ঘরে বেশি হামলা চালায়। অনেক সময় হাতি ও হরিণের মতো বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। তখন অনেক সময় গ্রামবাসীদের ছোড়া ইট-পাথরে জখম হয় বন্য প্রাণীরা। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘরোলের মতো বন্যপ্রাণীকে পিটিয়ে মেরে ফেলার একাধিক উদাহরণও রয়েছে।
বন দফতরের উদ্যোগে হাতির হানা ঠেকাতে গ্রাম ঘিরে ব্যাটারি চালিত তারের বেড়া করে দেওয়া হলেও অনেক সময় সচেতনতার অভাবে গ্রামবাসীরা সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করছেন না বলে অভিযোগ। লোকালয়ে হাতি ঢুকে পড়লে, দিশাহীন ভাবে হাতি খেদানোর ফলে আরও বেশি ফসলের ক্ষতি হয়।
কিছুদিন আগে খড়্গপুর বন বিভাগের খেমাশুলির জঙ্গল রাস্তায় হাতির আক্রমণে এক মহিলার মৃত্যু হয়। এ সব ক্ষেত্রে কী-কী করণীয় তা জানেন না অধিকাংশ গ্রামবাসী। এমনিতেই জেলার বিভিন্ন বন বিভাগে বন কর্মীদের অনেক পদ শূন্য রয়েছে। মেদিনীপুর বন বিভাগের ৯টি রেঞ্জের আড়াইশো কর্মী পদের মধ্যে প্রায় দেড়শোটি পদ শূন্য। ফলে কর্মীর অভাবে উপযুক্ত নজরদারি ও জনসচেতনতার কাজটা করা যায় না।
বনকর্তাদের দাবি, বন্যপ্রাণ সাথীরা সেই ঘাটতি পূরণে অনেকটাই সহায়ক হবেন। ডিএফও (মেদিনীপুর) রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “জেলায় শীঘ্রই প্রকল্পটি রূপায়িত হবে। বন্যপ্রাণ সম্পর্কে লোকশিক্ষা ও জনসচেতনতার দায়িত্ব পালন করবেন বন্যপ্রাণ সাথীরা।