তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমান। —ফাইল চিত্র।
দলেরই এক নেতাকে খুনের অন্যতম অভিযুক্ত। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিনি ‘ফেভারিট’। সেই ‘ফেভারিট’ তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমানের জামিনের পরেই পাঁশকুড়ায় কার্যত উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁর অনুগামীদের মধ্যে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এখনই জেলায় ফিরতে না পারলেও তাঁর অনুগামীরা শনিবার মিষ্টি বিলি করলেন আর ফাটালেন বাজি। পাঁশকুড়ার পুরসভার প্রধানের পদ তাঁকে ‘ফিরিয়ে দেওয়া’রও দাবি করছেন আনিসুর-অনুগামীরা।
২০১৯ সালে মাইশোরার তৃণমূল নেতা কুরবান শা হত্যা মামলায় আনিসুর গ্রেফতার হন। সে সময় বিজেপিতে থাকলেও জেলে থাকাকালীন তৃণমূলে ফেরার কথা ঘোষণা করেন আনিসুর। পাঁচ বছর পর শর্ত সাপেক্ষে আনিসুরের জামিন মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই খবরের পরে এ দিন পাঁশকুড়া জুড়ে কার্যত উৎসবে মেতেছেন তাঁর অনুগামীরা। আগামী পুরসভা নির্বাচনে আনিসুরকে পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান তাঁরা। গড় পুরুষোত্তমপুরের বাসিন্দা তথা এক আনিসুর অনুগামী আসিফ মল্লিক বলেন, ‘আনিসুরদা দু'মাসে পাঁশকুড়া পুরসভায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন। ওঁকে অনৈতিকভাবে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয়েছিল। এখন উনি জামিনে মুক্ত। আগামী পুরসভা নির্বাচনে আনিসুর রহমানকেই চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই।’’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের পুরসভা নির্বাচনে পাঁশকুড়ার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টিতে তৃণমূল জতে। তমলুকে জেলাশাসকের অফিসে চেয়ারম্যান নির্বাচনের ভোটাভুটি হয়। ১১ জন কাউন্সিলর আনিসুরকে সমর্থন করেন। বিপরীতে তৃণমূলের নন্দকুমার মিশ্রকে সমর্থন করেন সাত জন কাউন্সিলর। আনিসুর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় শিশির অধিকারী ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। আনিসুর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর শিশিরের চিঠি পৌঁছয় জয়ী কাউন্সিলরদের কাছে। সেখানে বলা হয় নন্দকুমার মিশ্রকে চেয়ারম্যান হিসেবে চায় দল। দলের বিপরীতে হেঁটে দু’মাস পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন আনিসুর। তবে শেষে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী আনিসুরকে দলীয় কোনও পদ দেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে তাঁর অনুগামীরা তাঁকে পুরপ্রধান হিসাবে দেখতে চাইছেন। আনিসুরের ভাইপো তথা তমলুক জেলা যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমার কাকার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর পাশে থাকা সত্ত্বেও ওঁকে সে সময় পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। উনি পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান পদের আসল দাবিদার।’’ এদিকে, আনিসুরের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের চর্চায় হতাশ নিহত কুরবানের পরিবার। কুরবানের দাদা আফজল শা বলেন, ‘‘আমার ভাইও তো তৃণমূল করত। ওর খুনিকে তৃণমূল পদে ফেরানোর চিন্তায় ব্যস্ত। এর থেকে লজ্জার কী থাকতে পারে!’’