ভস্মীভূত: পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পাম্পের সব জিনিস। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল সরবারাহ প্রকল্পের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল শনিবার। রবিবার পৌষ সংক্রান্তির দিন থেকেই সরবরাহ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার রাতেই এক দল দুষ্কৃতী প্রকল্পের সাবমার্সিব্ল পাম্পের পাইপ ও বিদ্যুতের তার-সহ বেশ কিছু সরঞ্জাম পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। এর ফলে প্রকল্পটি শুরুর দিনেই তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। কাঁথি ৩ ব্লকের কুসুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রানিচকের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গ্রামবাসীর মধ্যে।
কুসুমপুর পঞ্চায়েত এলাকায় এমন ২২টি গ্রাম রয়েছে, যেগুলি ‘নন-টিউবওয়েল’ এলাকা। অৰ্থাৎ, যে গ্রামগুলির ভূগর্ভস্থ জলস্তর অনেক গভীর। সেখানে ২০ ফুটের পাইপ লাইন দিয়ে সহজে জল ওঠে না টিউবওয়েলে। কাঁথি ৩-এর বিডিও মহম্মদ নূর আলম জানান, গ্রামগুলিতে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের।
সেই সমস্যা সমাধানেই উদ্যোগী হয়েছে সিপিএম পরিচালিত কুসুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। চতুর্দশ অৰ্থ কমিশনের অর্থানুকূল্যে প্রথমে পরীক্ষা মূলক ভাবে রানিচক ও পিঠুলিয়া গ্রামে সাবমার্সিব্ল পাম্পের মাধ্যমে পাইপলাইনে সরাসরি বাড়ি-বাড়ি জল সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পঞ্চায়েত। প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা। দু’টি গ্রামের ৭৪০ বাড়িতে জল পৌঁছনোর কথা। সেই মতো শনিবার কাজ শেষ হয়। সে দিন পাম্প চালিয়ে জল তুলে পরীক্ষাও করা হয়। পানীয় জল পৌঁছয় প্রায় তিরিশটি বাড়িতে। বাকি বাড়িগুলিতে জল যাওয়ার কথা ছিল রবিবার। কিন্তু অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে খড়ে আগুন দিয়ে পাইপ-সহ প্রকল্পের সব জিনিসপত্র পুড়িয়ে দেয় দুষ্কতীরা। এই ঘটনায় রবিবার মারিশদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন কুসুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শঙ্করী বর। তাঁর কথায়, “রানিচক গ্রামের দু’-তিন জন ব্যক্তি প্রথম থেকে প্রকল্পের বিরোধিতা করছিলেন। তাঁদের দাবি, পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি বাড়ি-বাড়ি জল সরবরাহ করা যাবে না। আগে স্থায়ী ট্যাঙ্কে জল ধরে সেখান থেকে সরবরাহ করতে হবে। প্রথমে পরীক্ষামূলক ভাবে ছোট করে প্রকল্প করতে চেয়েছিলাম। সফল হলে তা বড় করা যেত। তবে কয়েক জন স্থানীয় বারবার বাধা দেন। এ নিয়ে কিছু দিন আগে কাঁথি ৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজ গ্রামে বৈঠকও করেছেন।”
রবিবার মারিশদা থানার পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিকাশবাবু। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশবাবু বলেন, “আগে এলাকায় গিয়ে বলে এসেছিলাম, উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। কোনও বাধা তৈরি করা যাবে না। আজও তা-ই বলছি। কারা এ কাজ করল, খোঁজ নিচ্ছি।” তাঁর দাবি, দুষ্কৃতীদের রাজনৈতিক রং দেখা হবে না। কাঁথি মহকুমা পুলিশ আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, “পুলিশ এলাকা পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
এ দিকে প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই আগুন লাগার ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। কাঁথি ৩ পঞ্চায়েত সমিতির অন্যতম বিরোধী নেতা ঝাড়েশ্বর বেরা বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট সামনে। তাই সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত এমন প্রকল্প বাস্তবায়িত করুক, তা অনেকেই চাইছেন না। কিছু স্থানীয় তৃণমূল সমর্থক এ বিষয়ে দলের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন।” কাঁথি ৩ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি নন্দদুলাল মাইতির কথায়, “ওখানে সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই এই ঘটনা। সিপিএম নজর ঘোরাতে চাইছে। তৃণমূল প্রথম থেকেই প্রকল্পের পক্ষে। আগে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন তৃণমূল নেতা বিকাশ বেজ। তৃণমূল বলেছে, উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি হবে না।”
যদিও এই রাজনৈতিক তরজায় আগ্রহী নন রানিচক গ্রামের সাধারণ মানুষ। স্থানীয় নিতাই জানার কথায়, “আমরা রাজনীতি বুঝি না। জল চাই। আর যারা আগুন লাগিয়েছে, তারা যে দলেরই হোক, শাস্তি চাই।”