বুলবুলের ক্ষতিপূরণ
Cyclone

কেউ বাড়তি পেলেন, কেউ পেলেনই না

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পটাশপুর-১ ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৩৭ হাজার কৃষক বুলবুলের ক্ষতিপূরণের চেয়ে আবেদন করেছেন।

Advertisement

গোপাল পাত্র

পটাশপুর শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ০০:৫৯
Share:

ফাইল চিত্র।

কোনও কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা ঢুকেছে। কারও অ্যাকাউন্টে আবার ক্ষতিপূরণের টাকাই ঢোকেনি।

Advertisement

বুলবুলের ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে এমনই ছবি উঠে এসেছে পটাশপুর-১ ব্লকে। কৃষি দফতরের কাজের গরমিলে পটাশপুর-১ ব্লকে বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের অ্যাকাউন্টে হিসাব বহির্ভূত অতিরিক্ত ৬০ লক্ষ টাকা ঢুকে গিয়েছে। অতিরিক্ত ওই টাকা ফেরতের জন্য সংশ্লিষ্ট চাষিদের কাছে নোটিস পাঠাচ্ছে কৃষি দফতর। যদিও বিরোধীদের দাবি, ঘুরপথে চাষিদের অ্যাকাউন্টে অতিরিক্ত টাকা ঢুকিয়ে তৃণমূল নেতাদের কাটমানি খাওয়ার এটা নতুন কৌশল।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পটাশপুর-১ ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৩৭ হাজার কৃষক বুলবুলের ক্ষতিপূরণের চেয়ে আবেদন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত জমির রেকর্ড এবং ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট-সহ চাষিরা আবেদন করেন। পঞ্চায়েতগুলি চাষিদের কাছ থেকে সেই আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করে ব্লকে কৃষি দফতরে পাঠিয়ে দেয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের নামের তালিকা পাঠানোর শেষ দিন ছিল। ব্লক সহ কৃষি আধিকারিকেরা সেই ফর্ম যাচাই করে জেলা দফতরে নামের তালিকা পাঠিয়েছেন। পটাশপুর-১ ব্লকের ৩৭ হাজার কৃষকের নামের তালিকা জেলা মুখ্য কৃষি দফতরে পাঠানো হয়। অভিযোগ, অমর্ষি -১, অমর্ষি-২, চিস্তিপুর-১, চিস্তিপুর-২ এবং গোকুলপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ১৬০০ কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বুলবুলের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্য টাকার তুলনায় বেশি টাকা ঢুকেছে। জেলায় মোট কুড়ি হাজার অ্যাকাউন্টে এই সমস্যা হয়েছে।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, পাঁচটি পঞ্চায়েতের ষোলো হাজার কৃষকের অ্যাকাউন্টে অতিরিক্ত ষাট লক্ষ টাকা ঢুকে গিয়েছে। অথচ এখনো কয়েক হাজার বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের অ্যাকাউন্টে এক টাকাও ঢোকেনি বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠছে ব্লক কৃষি দফতরে ফর্মের যাচাই করে চূড়ান্ত তালিকা জেলা মুখ্য কৃষি দফতরে পাঠানো হয়। জেলা সেই তালিকা ধরে ক্ষতিগ্রস্তদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠায়। যে সব কৃষক বেশি টাকা পেয়েছেন তাঁদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে পাঠানো হয়েছে। বাড়তি টাকা ফেরত দেওয়ার ওই কৃষকদের নামে নোটিস পাঠানো হচ্ছে। আগামী পনেরো দিনের মধ্যে জেলার কৃষি দফতরের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে বাড়তি সেই টাকা জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি কোনও কৃষক বাড়তি টাকা ফেরত না দেন, তবে আগামী দিনে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী বিজেপি। বিজেপির দাবি, তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতে বহু বিজেপি সমর্থক এবং কর্মী কৃষকদের আবেদন ইচ্ছাকৃত ভাবে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। বহু আবেদন পঞ্চায়েতে রেখে দেওয়া হয়েছে। আধিকারিকদের হাত করে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে বেশি টাকা পাইয়ে দিয়ে ঘুরপথে কাটমানি খাওয়ার নতুন কৌশল নিয়েছে তৃণমূল।

কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই সরকার গরিব কৃষক বিরোধী। তাই গরিবের টাকা আত্মসাৎ করে নিজেদের উন্নয়ন করছে। প্রকৃত কৃষকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন।’’

পটাশপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মুক্তিপদ বেরা জানান, জেলা কৃষি দফতরে ভুলের কারণে অতিরিক্ত টাকা কিছু কৃষকের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। এখানে কোনও কারচুপির বিষয় নেই। যাঁদের অ্যাকাউন্টে বেশি টাকা ঢুকেছে তাঁদের নামের তালিকা ধরে নোটিস পাঠিয়ে টাকা ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কেউ ফেরত না দিলে আগামী দিনে তাঁকে যাবতীয় সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে।

জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসক) আশিস বেরা বলেন, ‘‘অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ৮ লক্ষ আবেদন যাচাই করতে হয়েছে। কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুলে এই সমস্যা হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সকল আবেদনকারী তাঁদের ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে যাবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement