আলু তুলে মজুত করা হচ্ছে জমিতেই। ঘাটালে। নিজস্ব চিত্র
আলুর দর না পাওয়া নিয়ে চাষিদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রতি মরসুমেই থাকে। সমস্যা মেটাতে এ বার সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য। কিন্তু সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারির দিন পাঁচেক পরেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কোনও চাষি এক কিলো আলুও সরকারি দরে বিক্রি করেননি।
চাষিদের বক্তব্য, সরকার ঘোষিত দামে আলু বেচলে আখেরে তাঁদের লোকসান বেশি হবে। তার থেকে খোলা বাজারে দাম বেশি। ফলে, সেখানে সেখানে আলু বিক্রি করলে লাভ না হোক, প্রাণটা বাঁচবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি ঘোষণার পরে সরকারি মূল্যে আলু কেনার কথা জোরকদমে প্রচার করা হয়েছে। চাষিদের ঘরে সরকারি নির্দেশ পৌঁছে দিতে বিভিন্ন সংগঠন-সহ সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত বৈঠক করেছে। সেখানে নিয়ম-কানুন সব বলে দেওয়া হয়েছে। চাষিরা বাড়ির কাছে হিমঘরে আলু বিক্রি করতে পারবেন, সে কথা জানানো হয়েছে। হিমঘর মালিকরাও আলু কিনতে প্রস্তুত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে ভাবে কোনও চাষি নাম নথিভুক্ত করাতে বিডিও অফিসে আসেননি। উল্টে দু’দিন আগে মাঠে চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের এক প্রশাসনিক আধিকারিকদের দেখতে পেয়ে ক্ষোভ জানিয়ে দু’-চার কথা শুনিয়েছেন চাষিরা।
অথচ, চলতি মরসুমে আলুর ভাল দাম না থাকায় চাষিরাই সহায়ক মূল্যে আলু কেনার দাবিতে সরব হয়েছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলিও বিক্ষিপ্ত ভাবে ন্যায্যমূল্যে আলু কেনার দাবি তুলেছিল। তারপরই সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু কেনার কথা ঘোষণা করেছে। গত ৩ মার্চ সরকারি ওই নির্দেশিকায় সাড়ে ছ’শো টাকা কুইন্টাল দরে চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনার কথা জানানো হয়েছে। এক জন চাষি সর্বাধিক ২৫ কুইন্টাল আলু বিক্রি করতে পারবেন। তবে চাষিদের মাঠ থেকে আলু বস্তাবন্দি করে হিমঘরে পৌঁছে দিতে হবে। হিমঘর মালিকরা সেই আলু কিনবেন। চাষির অ্যাকাউন্টে তাঁরা টাকা দেবেন। সরকারের সঙ্গে হিমঘর মালিকদের এমনই চুক্তি হয়েছে। আলু কিনতে হিমঘর মালিকরা সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাবেন। আর চাষিদের সরকারি মূল্যে আলু বিক্রি করতে হলে যাবতীয় নথি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিডিও অফিসে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। বিডিও অফিস থেকে চাষিদের দেওয়া হবে টোকেন।
ঘাটাল বিডিও অফিসের এক পদস্থ আধিকারিক মানলেন, “শুক্রবার পর্যন্ত কোনও চাষি আসেননি। নাম নথিভুক্তির জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু চাষিরই তো দেখা নেই।” চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ওই দামে আলু বিক্রি করলে পকেট থেকে টাকা গুনতে হবে। বিঘা প্রতি আলু চাষে ৩০-৩২ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। আলুর উৎপাদন মোটের উপর ভাল। প্রতি বিঘায় গড়ে ৮০ বস্তা (প্রতি বস্তা ৫০ কিলো) আলু পাওয়া যাচ্ছে। আর এখন খোলা বাজারে আলুর দাম ৭০০-৭৫০ টাকা কুইন্টাল। ওই দরে মাঠ থেকে আলু বিক্রি করলে সুবিধা। কারণ হিমঘরে বেচতে গেলে বাড়তি পরিবহণ খরচ পড়বে।
চন্দ্রকোনার বান্দিপুরের আলু চাষি গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, “এখন খোলা বাজারে ৭৫০ টাকা কুইন্টাল আলুর দর। তাই সরকারি মূল্যে আলু বিক্রি করলে বাজারের তুলনাই বস্তা প্রতি ৫০ টাকা লোকসান হবে। তার সঙ্গে হিমঘরে পৌঁছনোর পরিবহণ খরচ, মজুরি ধরলে পুরোটাই লোকসান।” পশ্চিমবঙ্গ হিমঘর অ্যসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির সদস্য শেখ জিয়ায়ুর রহমানও তাই মানছেন, “এখনও কোনও চাষি টোকেন নিয়ে হিমঘরে আসেননি। আলু কেনাও শুরু হয়নি।” (চলবে)