সব্জি চাষ করলেই মিলবে ৪০ শতাংশ ভর্তুকি। গত অর্থ বর্ষ থেকে এই নিয়মই কার্যকর হয়েছে গোটা রাজ্যে। কিন্তু এই নিয়মের কথা জানেন না পশ্চিম মেদিনীপুরের ৮০ শতাংশ কৃষিজীবীই।
শীত থেকে গ্রীষ্ম— যে কোনও মরসুমে সব্জি চাষ করলেই চাষিরা উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ দেখালে জেলা উদ্যান পালন দফতর থেকে পাওয়া যাবে টাকা, কৃষকের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে। লোকসান পুষিয়ে দিতে ও সব্জি চাষে উৎসাহ দিতেই রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা প্রকল্প থেকে এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বীজ কেনা থেকে রোপন, সেচ, সার ও মজুরী-সহ চাষের বিভিন্ন স্তরে যে খরচ হয় তার উপযুক্ত প্রামাণ্য দলিল এবং জমির ফোটো কপি জমা দিতে হবে। কৃষকের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে ভর্তুকির টাকা।
কিন্তু সুবিধার কথা জানানোই যায়নি অধিকাংশ চাষিকে। সে কথা স্বীকারও করে নিলেন জেলা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক কুশধ্বজ বাগ। তিনি বলেন, “ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরে প্রচার শুরু হয়েছে। তবে কর্মী সংখ্যা এত কম যে সবাইকে জানানো যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে সবাই জানতে পারছেন।’’ তাঁর দাবি ইতিমধ্যেই শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সব্জি চাষে জেলার প্রায় শতাধিক চাষিকে ভর্তুকির টাকা বিলি করা হয়েছে। এখনও বিলি চলছে। কর্মীর অভাবের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহও।
উদ্যানপালন দফতর সূত্রের খবর, যে কোনও মরসুমি সব্জি চাষ করলেই চাষের মোট খরচের ৪০ শতাংশ টাকা চাষিরা পেয়ে যাবেন। পরে ফসল বিক্রির টাকা তো পাবেনই। এর ফলে চাষিরা মরসুমি সব্জি চাষে উৎসাহী হবেন বলে উৎপাদনের পরিমানও বাড়বে বলে আশা। স্বাভাবিক ভাবেই লাভবান হবে সাধারণ ক্রেতারা।
তবে আপাতত বেগুন, কাঁচালঙ্কা, টম্যাটো, কপি-সহ বিভিন্ন প্রকারের সব্জি যাদের চারা রোপন করা হয় বীজ থেকে, সেক্ষেত্রেই মিলবে এই ভর্তুকি। শুধু তাই নয়, যে কোনও চাষিই মাত্র এক বিঘা জমির উপর ভর্তুকি পাবেন।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষের আশা, ‘‘এই ভর্তুকির ফলে খরা বা বর্ষায় জল জমে সব্জির চারা ক্ষতি হলে কিছুটা হলেও চাষিরা স্বস্তি পাবেন। আর ফলন পেলে তো কথায় নেই।’’
কিন্তু অধিকাংশ কৃষকই যে জানেন না বিষয়েটি। সে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘‘আমরা জেলার বিভিন্ন অংশে দ্রুত প্রচার শুরু করব। মূলত পঞ্চায়েতের মাধ্যমে এই প্রচার চালানো হচ্ছে।’’
ভর্তুকি পাওয়ায় খবরে খুশি কৃষকমহল। জেলার দাসপুর, ডেবরা, চন্দ্রকোনা, গড়বেতা, গোয়ালতোড়-সহ বিভিন্ন ব্লকে ব্যাপক সব্জি চাষ হয়। আর সেই সঙ্গে থাকেই নানা সমস্যা। প্রচণ্ড গরমে গাছের পাতা ও গোড়া শুকিয়ে যাওয়া, শীতকালে ফলন কম হওয়া বা বর্ষায় জমিতে জল ঢুকে গাছ নষ্ট হওয়টা চেনা ছবি।
এর ফলে যে কোনও মরসুমি চাষেই কিছু এলাকায় সব্জির ক্ষতি হয়। লাভ পাওয়া দূর অস্ত, চাষেক খরচটুকুও ওঠে না সব সময়। গড়বেতার ধাদিকার এক চাষি সুফল ঘোষ, দাসপুরের পঞ্চানন জানারা বলেন, “এ বার শীতকালীন সব্জি চাষ করার আগে দফতরে গিয়ে ভাল করে বিষয়টি জানব। কমবেশি সব চাষি পরিবারই উপকৃত হবে।”
হারাধন মণ্ডলের কথায়, ‘‘ আমরা তো এসব জানতামই না। কেউ কখনও বলেইনি। এ বার আমার নিজেরাই খোঁজ নেব।’’
আবার অনেকেই সন্দিহান। ভর্তুকি তো পাবেন শুধু জমির মালিক। ভাগচাষিদের কথা ভাববে কে? কুশধ্বজ বাগ অবশ্য জানালেন, কোনও জমির মালিক যদি চুক্তির ভিত্তিতে ভাগচাষি বসান তবে সেই ভাগচাষিও ভর্তুকি পাবেন।